কলকাতা ব্যুরো: ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার জন্য আবারও কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার ঘাটালের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এই কথাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় সেচমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে রাজ্যের প্রতিনিধি দল ৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর না হওয়ার জন্য এদিনও কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
প্রায় ১১ দিন জলমগ্ন ঘাটাল। এই অবস্থায় মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে ঘাটালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী৷ হেলিকপ্টারে ঘাটাল পৌঁছনোর সময় আকাশপথেই বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরপর জল জমে থাকা রাস্তাতে নেমে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়েও দেখেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তবে ঘাটালে গিয়েও এদিন পরিকল্পিত বন্যার অভিযোগে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, জলসম্পদ মন্ত্রী মানস ভুইঞা, ঘাটালের সাংসদ দেব, পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়াদের দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সেচমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করারও দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঝাড়গ্রাম থেকে আসার পথে হেলিকপ্টার থেকে দেখেছি ৷ বাড়ি, ঘর, মাঠ দোকান সব ভেসে গিয়েছে ৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বার বার বলা হলেও কেন্দ্র অনুমোদন দিচ্ছে না ৷ ছোটবেলা থেকে মানসদাদের কাছে শুনছি মেদিনীপুর মানেই কপালেশ্বর-কেলেঘাই প্রকল্প ৷ আমরা ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে সেই কাজ করে দিয়েছি ৷ ফলে মানুষ অনেকটাই উপকৃত হয়েছেন ৷ এখন বর্ষা বেশি হচ্ছে ৷ তার উপর জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে পরিকল্পিত বন্যা হচ্ছে ৷ তবে এদিন ঘাটালে এসে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেন, নিম্ন দামোদর অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার ৷ চেক ড্যাম তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অনুমোদন না দেওয়াতেই ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ঘাটালের অবস্থা ভয়াবহ ৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর না হলে ঘাটালকে বাঁচানো যাবে না৷ আমরা যতটা করার করেছি ৷ কিন্তু একই বছরে কোভিড, আমফান, ইয়াসের মতো দুর্যোগের সঙ্গে বন্যাও চলে এসেছে ৷ প্রশাসনিক স্তরে যা করার করা হবে৷ মানুষ বিপদে পড়লে কোনও ভেদাভেদ করা হবে না ৷
পাশাপাশি এদিন ঘাটালে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন প্রশাসনকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। ঘাটালে প্রতিবছর বন্যা হয় কারণ এটা খুবই নীচু এলাকা। এর জন্য ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, যেটা কেন্দ্রের হাতে রয়েছে কিন্তু আর্থিক বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না, প্রজেক্টের জন্য টাকা দিচ্ছে না। এখানে বন্যা আবার কিছুটা পরিকল্পিত। তবে অনেক মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। সমস্ত বিধায়ক ও প্রশাসনের লোকদের বলছি রাজধর্ম পালন করতে। ত্রাণ নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়। সবাই যেন ত্রাণ পায়।
প্রসঙ্গত, ইয়াস কিংবা ঘূর্ণীঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ কিংবা আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রে বারবার বিরোধীরা আত্মসাৎের অভিযোগ তুলেছেন। এবারেও বন্যাতে ত্রাণ নিয়ে কিছু জায়গায় অশান্তি কিংবা রাজনীতির ছবি ধরা পড়ার জন্যই সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে জমা জলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই পাল্টা আক্রমণ করেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্টে অগ্নিমিত্রা পল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে লিখেছেন, তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে ঘাটালে বন্যার জলে কেন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে? রাজ্যবাসীর কাছে এটা ভালো বিজ্ঞাপন নয়। ১২৩৮ কোটি টাকার ঘাটাল মাস্টার পরিকল্পনা জমা আছে। রাজ্য সরকার নিজের প্রাপ্যের টাকা জমা দিতে পারছে না। আগের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার কোণও হিসেব নেই। ক্ষমতায় আসার দশ বছর পরেও শুধু দোষারোপ কেন?
পাশাপাশি অগ্নিমিত্রা প্রশ্ন করেন দামোদর বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৭ সালে দু’টি আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক থেকে দু’হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই টাকাই বা কোথায় গেল? বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই সরকারের সঠিক পরিকল্পনা কী? পরিকল্পনার অভাবে রাজ্যবাসী আর কতদিন ভুগবেন?