আফ্রিকা মহাদেশের ছোট একটি দেশ সোয়াজিল্যান্ড। অর্থনৈতিকভাবেও দেশটি অনেকটাই পিছিয়ে। স্বভাবতই ওই দেশের নাগরিকদের জীবনও খুব সাদামাটা। বিত্তবৈভবও যে নেই সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাহলেও সে দেশের যিনি রাজা তিনি আছেন মহাসুখে! অমিতচারী শাসক হিসেবে রাজা তৃতীয় সোয়াতির যথেষ্ট খ্যাতি আছে। কেবল তাই নয়, প্রায় প্রতি বছর বিয়ে করে তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ১৫জন এবং ৩৫ জন সন্তান রয়েছে। সেই স্ত্রীদের নিয়ে তিনি প্রাইভেট জেটে চড়েন। তাদের শখ-আহ্লাদেরও কমতি রাখেন না। ১৫ জন স্ত্রীর জন্য বিলাসবহুল গাড়িও কিনে দিয়েছেন।
সোয়াজিল্যান্ডের রাজারা ‘দ্য লায়ন’ নামে পরিচিত। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকও তাদের পরিচয় বহন করে। বিয়ে করার জন্য স্ত্রী বাছাই করার পদ্ধতিটাও অন্যরকম। প্রতিবছর আগস্ট মাসে তারা একটি উৎসবের আয়োজন করে। যার নাম হয় রিট নাচ। আট দিনব্যাপী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৪০ হাজার কুমারী মেয়ে। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে নাচে অংশগ্রহণের পাশাপাশি মাতৃভাষায় গান গেয়ে থাকে। এই উৎসবের তাদের গান এবং নাচ দেখে চল্লিশ হাজার সুন্দরীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নান রাজা। এবং তাকেই বিয়ে করেন।
জানা যায় এর আগের রাজারও ৭০টির বেশি স্ত্রী ছিল এবং ছেলে মেয়ে ছিল ১৫০ জন। তবে কয়েক বছর আগে সোয়াজিল্যান্ডেরই ২২ বছরের তরুণী টিন্টসোয়ালো নগুবেনিকে রাজা বিয়ে করতে চাইলে নগুবেনি রাজি হন না, তিনি পালিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। নগুবেনির বক্তব্যে জানা যায়, সোয়াজিল্যান্ডের রাজার স্ত্রীরা রাজপ্রাসাদে দেহরক্ষীবেষ্টিত থাকেন। তাঁরা রাজার অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারেন না। তবে প্রতিবছর একবার আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পান তাঁরা। তখন রাজা তাদের কেনাকাটার জন্য অনেক টাকা দেন। এদিকে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর নগুবেনি সোয়াজিল্যান্ডের নিপীড়ক শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে পরিণত হন। দেশটিতে বিরোধী নেতাদের নিয়মিতভাবে গ্রেপ্তার কিংবা হত্যা করা হয়। এসবের বিরুদ্ধে লন্ডনে অবস্থিত সোয়াজি দূতাবাসের সামনে নগুবেনির প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে তাঁর দেশের নজরে এসেছে। নগুবেনি জানিয়েছেন, সোয়াজিল্যান্ড থেকে লোক পাঠিয়ে তাঁকে ধরার চেষ্টা করা হয়।
সাধারণভাবে সোয়াজিল্যান্ড দেশের প্রধান হচ্ছেন রাজা। তিনি যা বলেন এবং করেন সেটাই হলো সে দেশের আইন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রাজার। কিন্তু আজকের দিনে কোনো দেশের রাজার ১৫ স্ত্রী থাকা অবাক করার মতোই ঘটনা। যে কারনে বিভিন্ন সময় খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে ১৫জন স্ত্রীকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে রোলস রয়েস কিনে দিয়ে তিনি গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কয়েক বছর আগে দেশটির পঞ্চাশতম স্বাধীনতা দিবসে রাজা দেশটির নাম বদলে ফেলার ঘোষণা করেও খবরে শিরোনাম হয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন সোয়াজিল্যান্ডের নতুন নাম হবে ইসোয়াতিনি। পুরো নাম হবে দ্য কিংডম অব ইসোয়াতিনি। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে উপনিবেশিক নাম বদলে স্বদেশী নাম ডাকতে পেরে বেশ আনন্দ পেয়েছিল দেশটির জনগণও। দেশের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজা জানান, বিশ্বের যে কোনো দেশে গেলে ভুলবশত তাদেরকে সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা বলে মনে করা হয়। অনেক সময় নিজেদের পরিচয় সংকটে পড়তে হয়। এই জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।