কলকাতা ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার হলেন রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেন। বৃহস্পতিবারই বগটুই গ্রামে দাঁড়িয়ে আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘পলাতক’ আনারুলকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরভূমের বগটুই গ্রামে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেখানে গিয়ে তিনি কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ৷ তার পর তিনি জানান যে, গ্রামের লোকেরা ব্লক সভাপতি আনারুলকে সব জানিয়েছিলেন ৷ তারপরও পুলিশকে কোনও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি ৷ তাই তিনি আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, হয় আনারুল আত্মসমর্পণ করবেন, না হলে গ্রেফতার করা হবে ৷ যদিও আনারুলের গ্রেফতারি মেনে নিতে পারেননি তাঁর অনুগামীরা ৷ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা ৷
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই এদিন আনারুলের রামপুরহাটের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। পরে তারাপীঠের একটি বেসরকারি হোটেল থেকে তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আনারুল হোসেনের অনুগামীদের দাবি, দাদা আত্মসমর্পণ করেছেন।
কিন্তু কেন মুখ্যমন্ত্রী সেখানে পা রেখেই দলের স্থানীয় নেতা আনারুলের নাম উল্লেখ করলেন? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। রামপুরহাট ১ নং ব্লকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনারুল। সোমবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনওক্রমে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দা মিহিলাল শেখ অভিযোগ তুলেছেন, আনারুলের নেতৃত্বেই সেই রাতে গ্রামে হামলা চলেছিল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কান্নাভেজা গলায় সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফের এই নাম উল্লেখ করেছিলেন মিহিলাল। তাতেই কার্যত সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, আনারুল গ্রেপ্তার হবে। তারপরই তাঁর বদলে রামপুরহাট ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বগটুইকান্ড নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন সিপিএম নেতা। সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আগে যাওয়া উচিৎ ছিল সরকারি হাসপাতালে। সেখানে যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁদের দেখতে যাওয়া উচিৎ ছিল তাঁর। তার বদলে তিনি দু’পক্ষকে ডেকে মিটমাট করে নিতে বলেছিলেন। ভাদু শেখ মরে গেলে আনারুলের দাম নেই। সকাল থেকে যে দলের সম্পদ ছিল সে আপদ হল কী করে?
বগটুইয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে খাপ পঞ্চায়েত বলেই কটাক্ষ করেন তিনি। তিনি বলেন, যেখানে হাইকোর্ট বলছে, প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে। কেস ডায়েরি দিতে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে কেস সাজাতে বলছেন। তিনি বলছেন, আনারুল খারাপ কারণ পুলিশ পাঠায়নি। প্রথমে তো এসপিটাকে কান ধরে বার করা উচিত। ব্লক প্রেসিডেন্ট সব ঠিক করছেন, পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
অন্যদিকে আনারুলের দাবি আমি নির্দোষ। মিথ্যে অভিযোগ করছে গ্রামবাসীরা। আমি এখন আর কিছু মন্তব্য করছি না। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। ডেপুটি এসপি-র সঙ্গে কথা বলব। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলে দিয়েছেন, আমি আমাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। আমি তো ছিলাম না ওখানে। আমার বাড়ি সন্ধিপুর, আর এটা নিশ্চিন্তপুর, অনেক দূর। ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমরা রাজনীতি করি, মানুষের সঙ্গে এরকম ব্যবহারে বিশ্বাস করি না।