একদিকে পাইনের সারি। অন্যদিকে নীলাকাশে পেঁজা তুলোর মত উড়ে বেড়াচ্ছে মেঘ। ঝলমলে রোদে দূরে হাতছানি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আপন খেয়ালে যেই না আপনি খচাখচ ক্যামেরার সাটার টিপতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই যদি ঝুপ করে সব ঢেকে যায় অন্ধকারে? আপনি কিছু বোঝার আগেই দেখলেন মেঘেরা খেলে বেড়াচ্ছে আপনাকে ঘিরে, আপনাকে ছুঁয়ে। পাইনের বন দূরে থাক, কয়েক ফুট দূরে থাকা আপনার প্রিয় মানুষটাও হারিয়ে গেছে তখন মেঘের আড়ালে। শুধু শুনতে পাচ্ছেন তাঁর খিল খিল হাসি। ছবি তোলার আনন্দ মিস হয়ে যাওয়ায় দুঃখ তখন আপনিও ভুলতে বাধ্য। কারণ আপনিও তখন খেলে বেড়াচ্ছেন মেঘেদের রাজ্যে। মেঘ ঠেলে আপনার প্রিয়জনের হাত ধরার আনন্দে তখন প্রাণের উৎসব। অনাবিল হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছেন আপনারা।গল্প কথা নয়, দার্জিলিং পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট গাঁ লামাহাটায় গেলে এমনই মেঘ-রোদ্দুরের ভেলায় ভাসতে পারেন আপনিও।
দার্জিলিং থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে, ৫৭০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ে্য কোলে ছোট্ট জনপদ। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে তিস্তাবাজার হয়ে, আর মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে লামাহাটায়। ২০১২ সালে লামাহাটা নতুন করে সেজে ওঠে রাজ্যের নতুন ইকোটুরিজম স্পট হিসাবে। বহির্জগতের কাছে প্রকৃতির অনাস্বাদিত রূপকে পরিকল্পনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে আরো আকর্ষণীয় করে পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য সরকার।
লামাহাটায় প্রবেশের সময় প্রথমেই চোখে পড়বে রাস্তার একধারে পাইন আর ধূপির সারি। অন্যদিকে পিছনে নীলাকাশের ক্যানভাসে ছবির মতো পাহাড় সারি। নিচে তির তির করে বয়ে চলা তিস্তা যেন বনের পথে একাকী এক নারী। যেতে যেতে চোখে পড়বে রাস্তার ধারে সাজানো বাগান বা পার্ক। ছোটদের আবদার মেনে আপনাকে খানিকটা সময় সেখানে দিতেই হবে। মাত্র দশ টাকা মাথা পিছু দিয়ে ঢুকতে হবে পার্কে। গোটা চত্বর জুড়ে খেলবে তারা। আর সেই ফাঁকে বাহারি ফুল আর অর্কিডের সৌন্দর্যে কিছুক্ষনের জন্য অন্য জগতে পৌঁছে যান আপনারা।এখানকার অধিবাসী শেরপা,তামাং,ভুটিয়া।
লামাহাটায় রয়েছে দুটি লেক। একটু উঁচুতে, পাহাড়ি পথ বেয়ে সবুজ বনানী , ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ, আর পাখির ডাক শুনতে শুনতে পৌঁছে যাওয়া যাবে সেখানে। পাহাড়ী পথের নির্জনতা গা ছমছমে হলেও দারুণ আকর্ষনীয়।
লামাহাটা যাওয়ার উপরি পাওনা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুবর্ণসুযোগ। যা আপনার মন ভালো করবেই। আর ঘরে বসেও তা দর্শনের জন্য হয়েছে থাকার সুবন্দোবস্ত। স্থানীয় মানুষদের মালিকানায় তৈরী হোম-স্টে । আধুনিক সুবিধাযুক্ত ,আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত মনোরম থাকার ব্যবস্থা। তবে যদি ইচ্ছে হয় একটু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার তবে থাকতে পারেন তাঁবুতেও। সে ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রত্যেক তাঁবুতে দুজন করে থাকার ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে সপ্তাহ শেষে নির্জন প্রকৃতির কোলের পরম নিশ্চিন্তে ২-৩ দিন ছুটি কাটানোর মনোরম জায়গা এই লামাহাটা। খরচও একেবারে মধ্যবিত্তের নাগালে।