মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয় কলকাতায়৷ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের হঠাতে জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ছোঁরে৷ কোথাও কোথাও লাঠিচার্জও করে। কলকাতা পুলিশ আন্দোলনকারীদের আটকাতে হেস্টিংস, ফোর্ট উইলিয়াম চত্বর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যারেকড তৈরি করেছিল৷ কিন্তু আন্দোলনকারীরা একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীদের আটকাতে পুলিশ অনেক জায়গাতেই জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে, লাঠিচার্জও করে৷ এতে অনেক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন৷ অনেক জায়গায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোরে৷ তাতে একাধিক পুলিশ কর্মী আহত হয়৷
উল্লেখ্য, গত 9 অগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এক চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়৷ অভিযোগ, ওই চিকিৎসককে ধর্ষণের পর খুন করা হয়৷ সেদিন থেকেই এই নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ প্রথমে তা আরজি করের জুনিয়র ডাক্তাররা শুরু করলেও ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে৷ সেই দাবিতেই মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান করে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ৷ এই নিয়েই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ একই পরিস্থিতি তৈরি হয় হাওড়াতে৷ কারণ, সেদিক থেকেও নবান্ন অভিযান করা হয় সংগঠকদের তরফে৷
এদিকে এদিন ছিল নেট পরীক্ষা, সপ্তাহের প্রথম কর্মব্যস্ত দিন। এমন দিনে অফিসযাত্রীরা পড়েন বেজায় ভোগান্তির মুখে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বাড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশি নিরাপত্তা। যার জেরে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যান চলাচল। এই মিছিলের ফলে নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হয় অটো চালকরাও। বিক্ষোভের জেরে ঘুরে যেতে হয় অটোগুলিকে। এর জেরে ভাড়া নিয়েও বচসা হয় পথচারীদের সঙ্গে। অফিসযাত্রীরাও উগরে দেন ক্ষোভ। একাধিক রাস্তা ঘুরে ঘুরে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ করেছেন একাংশের পথচারী। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, নবান্ন অভিযানে আন্দোলনে মোট ১০টি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হয়েছে। আন্দোলনের নামে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করা বেশ কয়েকজনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় মোট ২৫ জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। প্রতিবাদের ঝড় দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও আছড়ে পড়েছে। জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রবাসী ভারতীয়েরা। বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন মেয়েরা। নিউ জ়িল্যান্ডেও আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়েরা। ক্রাইস্টচার্চের রাস্তায় নীরবতা পালন করলেন তাঁরা। একই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও আরজি করের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের। গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে এই আন্দোলন, প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ নেই। রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠছেন মহিলারা। আরজি কর-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও উঠেছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আরজি কর মেডিকেল কলেজের নৃশংস ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ।সাধারন জনতা থেকে তারকা, রাজপথে নেমে সকলের একটাই দাবি অভিযুক্তদের শাস্তি চাই। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে সরানো হয়েছিল ডুরান্ড কাপের হাইভোল্টেজ ডার্বি সহ আরো একাধিক ম্যাচ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হাইভোল্টেজ ম্যাচের দিন গ্যালারি থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে টিফো নামানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। যা খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা।যার ফলে মাঠের লড়াই নেমে আসে রাজপথে। ডার্বি বাতিল হলেও গত ১৮ই আগস্ট সল্টলেক চত্বরে ভিড় জমাতে শুরু করে তিন প্রধানের সমর্থকরা। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান হোক কিংবা মহামেডান। মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল সব। একটা সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্টেডিয়াম চত্বরে আনা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের বচসার পর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।
এই ডামাডোল পরিস্থিতির ফলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ডুরান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল। একই ভাবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচের ক্ষেত্রে ও সেরকম পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে শর্ত সাপেক্ষে বাংলায় ফিরিয়ে আনা হয় সেগুলি। যারফলে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ জয় করার সুবাদে ঘরের মাঠেই সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ চলে আসে মোহনবাগানের কাছে। তবে এই ম্যাচে টিফো বা ব্যানার আনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা শোনা গেলেও সেটা কাজে আসেনি। বিধাননগর পুলিশের তরফে জারি করা সেই নির্দেশিকা অনায়াসেই খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সুবাদেই মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারি থেকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে দেখা যায় ময়দানের দুই প্রধানের সমর্থকদের।পুরনো রীতি মেনেই ম্যাচের আগে গ্যালারি থেকে ছাড়া হয় একটি বিশেষ টিফো। যেখানে সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ জার্সিতে দেখা যায় দুই তরুণীকে। সেই টিফোতেই বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘হাতে হাত রেখে লড়াই।’ এবং ‘আমাদের বোনের বিচার চাই।’ যা রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে সর্বত্র।