আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণ ঘটনার ১৮ দিন অতিক্রান্ত। সিবিআই তদন্ত চলছে, এরই মধ্যে সেমিনার হল অর্থাৎ ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অবশ্য ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি তবে ওই ভিডিও যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বলা হচ্ছে এর থেকে নাকি ঘটনার মোড় অনেকটাই ঘুরে যেতে পারে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সেমিনার রুমের ভেতরে অর্থাৎ যেখান থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল সেখানে একেবারে থিকথিক করছে ভিড়। এই দৃশ্য যে নিয়ম-নীতি শিকেয় তুলেছে তা বলাই বাহুল্য। প্লেস অফ অকারেন্স তো পুলিশের বেষ্টনিতা থাকার কথা কিন্তু পুলিশ তা করেনি। আর তা করা হয়নি বলেই ধর্ষিতা ও নির্যাতিতার দেহ পড়ে থাকা স্বত্বেও সেখানে গিজগিজ করছে ভিড়। সেখানে যে কেউ ঢুকছে, বেরোচ্ছে পুলিশের কোনো বাধা ছাড়াই। আর ভিড়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুলিশ আধিকারিক, সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক চিকিৎসক দেবাশিস সোম, আইনজীবী শান্তনু দে, সেমিনার হলে দেখা যাচ্ছে প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কে।
ভাইরাল এই ভিডিও ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি এবং চিকিতসক মহল। প্রশ্ন উঠছে ঘটনাস্থল সুরক্ষিত কেন করা হল না? আরজি কর কাণ্ডের ঘটনার পরেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে এফআইআর দায়ের সহ একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি ময়নাতদন্তের পরে আননেচারাল ডেথ অর্থাৎ ইউডি মামলা দায়ের করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিশেষ বেঞ্চ। শুধু তাই নয়, আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে যেখানে বাবা-মাকে মেয়ের দেহ দেখতে না দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তাঁরা নিজের মেয়ের মুখ দেখতে চেয়ে পুলিশের কাছে বারংবার অনুরোধ করে হয়রান হয়েছেন সেখানে ঘটনাস্থলে বাইরের লোকেদের ভীড় এবং আলাপ-আলোচনা। ঘটনাস্থল সুরক্ষিত কেন করা হল না? যেখানে ধর্ষণ খুনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে বাইরের লোকেরা গেলেন কী করে? ঘটনাস্থল তো পুলিশের ঘিরে রাখার কথা। অপরাধের ঘটনাস্থল তদন্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে অনেকের উপস্থিতিতে পা ও হাতের স্পর্ষে প্রমাণ লোপাট হতে পারে।
সেমিনার রুমের ভীড়ে কারা রয়েছেন? রয়েছেন আরজি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, দেখা যাচ্ছে, সেমিনার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আইনজীবী শান্তনু দে। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, এই শান্তনু দে হলেন সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। কিন্তু সেখানে আইনজীবী কী করতে গিয়েছিলেন? প্লেস অফ অকারেন্সে দেখা মিলেছে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক চিকিৎসক দেবাশিস সোমের। সোমবার দেবাশিস সোমকে নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তিনি আরজি করের কর্মীই নন। হেলফ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের ডিটেইমেন্ট পোস্টিং দেবাশিসের। তাহলে তিনি সেমিনার রুমে ঘটনার পরই কী করছিলেন? এরপর প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। যিনি নাকি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, প্রসূন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে কাজ করেন।কে এঁদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন? এঁদের কেউই যখন আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত নন, এমনকি স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চ পদাধিকারী নন, তাহলে কেন তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন?
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমে পড়েছিল তরুণী চিকিৎসকের দেহ। বাইরে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর বাবা-মা। মেয়েকে দেখতে পাওয়ার অনুমতি মিলছিল না তাঁদের। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়েকে দেখতে পাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেদিন সেমিনার রুমে দেখা মিলেছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আপ্তসহায়ক, আইনজীবী, সন্দীপবাবু ঘনিষ্ঠ দেবাশিস সোম, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়দের। এ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসক মহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে একটা চুল পাওয়া গেলেও, সেটা অনেক বড় সূত্র। সেখানে কিন্তু দেহ উদ্ধারেরর পর মুহূর্তে এত মানুষ ঢুকে পড়লে প্রমাণ কি আর অবিকৃত থাকবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। যে শান্তনু এবং প্রসূনের সঙ্গে আরজি কর হাসপাতালের কোনও যোগ নেই তাঁদের কে বা কারা ডেকে পাঠালেন? তাঁরা ‘ক্রাইম সিন’-এ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। প্রশ্ন, ভয়াবহ খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পরেও কেন পুলিশ সবার আগে সেই জায়গায় যাতে কেউ না যায় সেটা আটকানোর চেষ্টা করল না? দরজা বন্ধ করলেই তো আটকানো যেত? সেটা কি ইচ্ছে করে আটকানো হল না? সেমিনার হলে লোকজন ঢুকে যাতে সব প্রমাণকে লোপাট করা যায় সেটাই কি উদ্দেশ্য ছিল?