৮ অগস্ট মধ্যরাত থেকে আজ এই মুহূর্ত পর্যন্ত অনেকগুলি দিন রাত সকাল সন্ধ্যা পেরিয়েছে কিন্তু কিনারা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, এটা কেন হল, ওটা হয়নি কেন? ইত্যাদি প্রভৃতি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে… আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্তভার গ্রহণের পরও কি এক ধাপ এগিয়েছে? আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত বিশেষ যে এগোয়নি সেটা আন্দোলনকারীরা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছেন। নির্যাতিতার পরিবারও একই অবস্থায়। তাঁদেরও আশা ভাঙছে, তাঁরা স্পষ্ট করেই বলেছেন যে তাঁরা সিবিআই তদন্ত নিয়ে ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছেন। তারা আরও স্পষ্ট করেই বলছেন, “সিবিআই তো এখনও ঘটনার কোনও কিনারাই করতে পারেনি। তাদের উপর আস্থা রেখেছিলাম। তারা ভালো তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে দৃষ্টান্ত তৈরি করুক”।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সঞ্জয় রায় নামে যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে কলকাতা পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করেছিল, সে ছাড়া এই মামলায় নতুন কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি সিবিআই। তারা একটানা কয়েকদিন অন্যতম অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষকে তাদের দফতরে ডেকে এনে জেরা করে ব্যাস ওই পর্যন্তই। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ১৬ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, সেই ঘটনা ঘিরে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এখন এমন এক অবস্থায়, যা নিয়ে প্রায় সব মহল থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আর কত দিন…? কতদিনে আপনারা ঠিকঠিক ভাবে জানাতে পারবেন, আদৌ কি কিছু জানিয়ে উঠতে পারবেন?
পুলিসের হাতে সেই একজন ছাড়া আর কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কিন্তু জেনে না জেনে অনেক কাণ্ডই ঘটিয়ে ফেলেছে তারা। যে কারণে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। সিবিআইয়ের উপর মানুষের আস্থা এখনও সামান্য হলেও রয়েছে, কিন্তু তারা সেই সম্মান রেখে দ্রুত তদন্ত শেষ করুক। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দালাল চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ করছে সিবিআই। পুলিস ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তাদের প্রশ্ন, প্রথম থেকেই প্রশাসন যে গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে চলছিল, সেটা সুপ্রিম কোর্টও বলেছে। গোটা দেশ সেটা এখন জেনে গিয়েছে। ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয়েছিল। তা না হলে সিবিআইয়ের এতদিন হয়তো সময় লাগত না। সেই জন্যই হয়তো সিবিআই এখন পলিগ্রাফ টেস্টের মতো পদ্ধতিতে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করছে।
মেয়ের দেহ দেখতে না দিয়ে কেন চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হল বাবা-মাকে? কেন প্রথমে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল? কর্মস্থলে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুন, অথচ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ক্রাইম সিন সুরক্ষিত করল না কেন? কাকে আড়াল করা হচ্ছে? সেই প্রভাবশালী কে? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, গণধর্ষণ হয়ে থাকতে পারে, অথচ সঞ্জয় ছাড়া আর কাউকে কেন ধরা গেল না এখনও? এমন হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের মনে, এমনকি গোটা রাজ্যবাসীর মনে। বলছেন, কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে হয়েছে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ শীর্ষ আদালত থেকে শুরু করে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।এই পরিস্থিতিতে সিবিআই দ্রুত এই নৃশংস অপরাধের কিনারা করুক, চাইছে সবাই সিবিআই ভালো এজেন্সি হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। আর একটু তৎপর হয়ে কাজ করুক।
অনেকেরই বক্তব্য, প্রথম থেকেই বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তা না হলে সিবিআইয়ের এতদিন সময় লাগত না। সেই কারণেই হয়তো সিবিআই এখন পলিগ্রাফ টেস্টের মতো অন্যভাবে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছে, কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়নি। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্য, ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিলে যে চক্রান্ত করেছিলেন, তা এখন প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। কেন স্পষ্ট উত্তর মিলছে না এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির? খোঁজ করতে গিয়ে একাধিক অসঙ্গতির দিক সামনে আসছে। যা এক সূত্রে বাঁধলে গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। তাঁদের প্রশ্ন, আর জি করের ঘটনার পরে ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কেন নিশ্চিত ভাবে জানা গেল না যে, ওই সেমিনার রুমেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল, না কি অন্য কোথাও? নির্যাতিতার মাথার কাছে ওর ডায়েরির পাতা পড়ে থাকা, পরিপাটি করে ওর জুতো সাজিয়ে রাখা দেখে তো মনে হয়, সবটাই সাজানো। গোটা দেশ উত্তর চায়, বিচার চায় এবং শাস্তি চায়।