মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িটেও ভেস্তে গেল জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে একে একে বেড়িয়ে গেলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মুখ্যসচিব মনোজ। টানা দুঘণ্টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ভিডিও ছাড়াই মিটিংয়ে রাজি ছিলেন জুনিয়ার ডাক্তারেরা, শুধু মিনিটস-এ দু’পক্ষের সই চাওয়া হয়েছিল৷ তখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এসে জানালেন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আর সম্ভব নয় বৈঠক।দীর্ঘক্ষণ ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দরজায় অপেক্ষা করেছিলেন জুনিয়ার ডাক্তারেরা।নিজেই উদ্যোগী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষারত জুনিয়র চিকিৎসকরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বৈঠকের ভিডিও করা না হলেও তিনি বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ের মিনিটস আন্দোলনকারীদের হাতে দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন৷
সন্ধে ছটায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জটেই আটকে ছিল বৈঠক। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির বাইরে এসে আন্দোলনকারীদের একাধিকবার বৈঠকের জন্য অনুরোধ করেন। তার পরেও খুলল না জট। আন্দোলনকারীদের দাবি বৈঠকের ভিডিয়োগ্রাফি করতে দিতে হবে। এরকম এক পরিস্থিতিতে রাত নটার পর একে একে বেরিয়ে গেলেন মুখ্যসচিব, তার পরেই বেরিয়ে গেলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা, বাকী আধিকারিকরা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি। এই অবস্থায় আঁচ করা যায় যে সমস্যা সমাধানের জন্য যে বৈঠক তা সম্ভবত হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন রাজ্য পুলিসের ডিগি ও স্বরাষ্ট্র সচিব, তারাও ধীরে ধীরে বেরিয়ে যান, তাহলে আন্দোলনকারীরা কি করবেন দরজায় দাড়িয়ে থাকবেন?
উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছিল। এবারও সেই একই দৃশ্য। কালীঘাটে বৈঠকের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও সেই একই জটিলতা। লাইভ স্ট্রিমিং বা ভিডিয়োগ্রাফি করতে দিতে হবে। ছটায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যায়। ঘরের দরজায় অপেক্ষা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে বসেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের সঙ্গে ভিডিয়োগ্রাফার নিয়ে গিয়েছিলেন। তাকেও বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ডাক্তারদের দাবি, গোটা বিষয়টি স্বচ্ছ হওয়া উচিত। তাদেরকেও আন্দোলনকারীদের জবাব দিতে হবে। তাই ভিডিয়োগ্রাফি বা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের প্রয়োজন।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের বলেন, তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। তোমরা বৃষ্টিতে ভিজো না। আমরা ভিডিয়োগ্রাফি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আমরা সবটাই রেকর্ড করব। নিশ্চিন্তে থাকো। আদালতে মামলা চলছে। আদালত অনুমতি দিলে তোমাদের তা দেব। তোমাদের জন্য আমাদের মুখ্যসচিব সহ অনেকেই অপেক্ষা করছে। মিটিং না করো তোমরা অন্তত এককাপ চা খেয়ে যাও। ভেতরে এসো। তোমরা ছোট, আমি বড়। আমি আন্দোলন করা লোক। আন্দোলনকে সম্মান দিতে আমি জানি। মানুষের স্বার্থে এসে কথা বলো। আমরা বৈঠকের মিনিটস করে দেব, সই করে দেব। তোমাদের পক্ষ থেকেও সই করবে। তোমাদের সব দাবি তো মানতে পারি না! সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে তোমাদের ভিডিয়ো দেব। হাতজোড় করে বলছি। তোমরা এসে। বাইরে বৃষ্টিতে ভিজো না। ওই কথা বলে মুখ্য়মন্ত্রী ভেতরে চলে যান।
শেষ পর্যন্ত নিঃশর্ত আলোচনায় রাজি হয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আর বৈঠক করতে চায়নি সরকার পক্ষ! এমনই দাবি তাঁদের। তাঁরা বলছে, ‘অনেক সময় পেরিয়ে গেছে’ এই মন্তব্য করে তাঁদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অভিযোগ, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাঁদের ফিরে যেতে বলেন। প্রশ্ন আচমকা মমতা কেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্ণা মঞ্চে পৌঁছলেন? মমতা কী ছাপে পড়েছেন? কারন কেবল রাজ্য নয় গোটা দেশে তাঁর বিপরীতে দাঁড়িয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জুনিয়ার ডাক্তারদের দিকে। বাংলা কখনো এমন আন্দোলন দেখেনি, দেখেনি আন্দোলনকারীদের এমন উজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত, অনমনীয় অথচ বিনয়ী মুখ। স্বভাবতই মমতা যে তাঁর রাজত্বের দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের কাণ্ডকারখানার মুখোস খুলে যাওয়ায় ভয় পেয়েছেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
এদিন বেলা ১টায় স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্ণামঞ্চে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে বলার পাশাপাশি শুনিয়ে দেন যে সামনেই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। এর কিছু পর চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ জানান জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ এবং সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষ কর্তাদের অপসারণের মতো পাঁচদফা দাবি থেকে যদিও সরেননি চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি সবস্তরের চিকিৎসকরাই বলছেন যে স্বাস্থ্যভবনের সরাসরি সক্রিয়তায় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রবল। আর জি করে তারই নমুনা ধরা পড়েছে। এই দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ার জন্যই ‘শাসানির সংস্কৃতি’ করে রেখেছে শাসকদল। এর আগে বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ হত্যায় তথ্য প্রমাণ লোপাটেও শীর্ষ স্তরে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দায়ী করছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা।