৩৫ দিন অতিক্রান্ত হল। আর জি কর কাণ্ডের পর তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা লাগাতার কর্মবিরতি, আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার পক্ষ থেকে একাধিক বার আলোচনার প্রস্তাব এলেও তা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসু হয়নি। এক বার নবান্নে এবং এক বার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। জুনিয়ার ডাক্তারেরা কিন্তু পউছে গিয়েছিলেন তাদের ৫ দফা দাবি নিয়েই। কিন্তু তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। সরকার তাদের প্রাথমিক দাবি স্বচ্ছতা অর্থাৎ সরাসরি সম্প্রচারের দাবিকে কোনোভাবেই মানতে রাজি নয়। তাহলে জুনিয়ার ডাক্তারেরা কিসের ভিত্তিতে আলোচনায় বসবেন? তাঁরা দেরিতে পৌঁছলেও আলোচনায় তাঁদের সদিচ্ছা যে রয়েছে তার প্রমান দিয়েছেন, বিনয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন, তাদের থেকে প্রশাসন আর কি চাইছেন? একটানা বৃষ্টিতে ভিজে তাঁরা অপেক্ষা করেছেন কিন্তু তাদের প্রতি ন্যুনতম সৌজন্যতা তো প্রশাসন দেখায়নি, বরং অত্যন্ত অমানবিতার পরিচয় দিয়েছে, অত্যন্ত হতাশ হয়েই জুনিয়ার ডাক্তারদের ফিরে আসতে হয়েছে। গোটা রাজ্যবাসী প্রশাসনের সেই অমানবিক এবং সৌজন্যতাহীন মুখ দেখেছেন এবং ছ্যা ছ্যা করেছেন।এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাজপথে মিছিল কপ্রেছে জুনিয়র ডাক্তারেরা। ও শহরতলিতে দিনভর বৃষ্টি চলেছে। আকাশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই সেন্ট্রাল পার্ক থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত চলেছে মিছিল। কেবল তারাই নয় মিছিল এবং জমায়েত হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের তরফে।সবার মুখেই সেই স্লোগান জাস্টিস ফর আর জি কর সেই সঙ্গে প্রশাসনকে তারা ধিক্কার জানিয়েছেন তীব্র ভাষায়।
আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে রাস্তায় বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার ছিল তাঁদের অবস্থানের ষষ্ঠ দিন। সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য শুরু থেকেই পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। এই দাবিগুলি নিয়েই রবিবার সল্টলেকের রাস্তায় মিছিল করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মিছিলের ঠিক মুখেই বড় বড় হরফে লেখা, “আর্জি নয়, দাবি কর।” ডাক্তারেরা বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, তাঁরা বিচার চাইছেন না। তাঁরা বিচার দাবি করছেন। বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় দিয়ে আরজি কর-প্রতিবাদ, পথে নামলেন নার্স, প্রাক্তনী থেকে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এগিয়ে গিয়েছে মিছিল। বিকেলে মিছিল শুরু হয়ে যখন তা স্বাস্থ্য ভবনের কাছে পৌঁছয়, তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। গোটা মিছিল থেকে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠল আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে। ভেসে উঠেছিল শিরদাঁড়া সোজা রাখার আহ্বান। ‘হোক প্রতিবাদ’ ধ্বনিতে রাস্তা জুড়ে জ্বলে উঠেছিলল অগুনতি মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলো। বিচারের দাবিতে যে তাঁরা এককাট্টা, সেটাই যেন বার বার ফুটে উঠেছিল ফ্ল্যাশের আলোয়। মিছিলে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে মানববন্ধন করতেও দেখা যায় ডাক্তারদের। আন্দোলনরত ডাক্তারদের মিছিলে রাস্তার দু’পাশ থেকে এগিয়ে আসেন প্রচুর সাধারণ মানুষ। পা মেলান তাঁরাও। মিছিলের বহর ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবীণদের কেউ কেউ এগিয়ে এসে আশীর্বাদ করেন জুনিয়র ডাক্তারদের। যে সাধারণ মানুষেরা ডাক্তারদের মিছিলে পা মেলালেন, তাঁরাও বুঝিয়ে দিলেন ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে তাঁরা একাত্ম। তাঁরা বলেন, “এ লড়াই আর শুধু ডাক্তারদের লড়াই নয়। এ লড়াই গোটা সমাজের। সাধারণ মানুষের লড়াই।”
উল্লেখ্য, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নৃশংস হত্যাকণ্ডের পর ৩৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। গত ৬ দিন ধরে দুর্যোগ মাথায় করে স্বাস্থ্যভবনের সামনে রাজপথে বসে সুবিচার চাইছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলন চলছে পাঁচ দফা দাবিতে। ইতিমধ্যে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। যা আন্দোলনকারীদের নতুন করে অক্সিজেন জুগিয়েছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। তার আগে পর পর দুদিন কর্মসূচি নিচ্ছেন তাঁরা। সোমবার দেশজুড়ে দুপুর ১২টা নাগাদ ১০ মিনিটের জন্য ‘পেন ডাউন’ পালন করবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। আউটডোরের বাইরে আধঘণ্টার জন্য তৈরি করবেন মানবশৃঙ্খল। সবটাই হবে রোগীদের সামনে। মনে করা হচ্ছে, মঙ্গলবার সুপ্রিম শুনানির আগে চাপ বাড়াতেই এই কর্মসূচি নিচ্ছেন ডাক্তাররা।