আরজি কর হাসপাতাল নৃশংস কাণ্ডের প্রতিবাদে যারা স্বাধীনতার রাত দখল করতে পথে নেমেছিলেন তাদের লক্ষ্য একটাই- শাস্তি চাই, কঠিন শাস্তি। স্লোগানও একটাই- উই ওয়ান্ট জাস্টিস। প্রতিবাদের কর্মসূচিতে হয়তো বাংলা প্রথমবার এই ধরনের কোনও অরাজনৈতিক জনজোয়ার প্রত্যক্ষ করলো। প্রকৃতপক্ষে জনতার গর্জন- কোনও ঢিলেমি নয়, ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে, দোষীকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। গড়িয়া, যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট, শ্যামবাজার, সখেরবাজার, দমদম, নিউটাউন, সল্টলেক, অ্যাকাডেমি চত্বর সহ একাধিক জায়গায় এই দাবিতেই সরব হয় বাংলার নারীশক্তি। কেবল নারীরা নয়, তাদের ডাকে সামিল হয়েছিল পুরুষেরাও। দেশের স্বাধীনতা দিবসের রাতে গোটা বাংলা তো বটেই দেশের আরও কয়েকটি শহরে মিছিল, স্লোগানে এবং জমায়েতে স্বাধীনতার এক অন্য রূপকথা লেখা হয়, ইতিহাস সৃষ্টি হয়।
বুধবার মধ্যরাতে শান্তিপূর্ণ সেই কর্মসূচি বদলে যায় তাণ্ডবলীলায়। একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় আরজি কর হাসপাতালেই। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে কার্যত ভেঙে তছনছ করে দেয় জরুরি বিভাগ। এই হামলার ঘটনায় লক্ষাধিক টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি। পাশাপাশি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে।প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই দাবি করেছেন, হামলাকারীরা হাসপাতালে ঢুকেই আগে জরুরি বিভাগে হামলা করে। টেবিল, চেয়ার থেকে শুরু করে যাবতীয় আসবাব ভেঙে দেওয়া হয়। হামলার পরে দেখা যায় সর্বত্র কাচের টুকরো পড়ে আছে। যদিও জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল ভাঙচুর হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ওই ঘর থেকেই মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল গত শুক্রবার। তবে এই ঘটনায় ওয়ার্ড ও নার্সিং স্টেশনে রাখা দামী প্রচুর ওষুধপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে চিকিৎসা সরঞ্জাম, রোগীদের বেড কিছুই ছাড়েনি দুষ্কৃতীরা।
শুধু হাসপাতালের ভিতরে নয়, বাইরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। একাধিক পুলিশের গাড়িতে, হাসপাতালের বাইরের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করছেন৷ হাজার-হাজার মহিলারা মাঝ রাতে রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ প্রায় মধ্য রাতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতিরা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে অবস্থানরত ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়৷ একাধিকজন পুলিশ কর্মীও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে খবর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। নামানো হয় ব়্যাফও। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি, পুলিশ নিজেদের বাঁচাতেই হাসপাতালের ভিতরে কোথাও কোথাও লুকিয়ে পড়ে। আর দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকে গিয়ে তাঁদের তো বটেই, রোগীর পরিবারদের, মহিলা কর্মীদেরও মারধর করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ শুরুতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হঠাৎ হামলার ঘটনায় কেন দ্রুত পদক্ষেপ করল না পুলিশ? উঠেছে সেই প্রশ্ন। তার থেকেও বড় প্রশ্ন এই দুষ্কৃতীরা কারা? কী রাজনৈতিক পরিচয়? সেই উত্তর এখনও মেলেনি। পাল্টা পুলিশি নিষ্কৃয়তার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। এরপর বৃহস্পতিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে তারা। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আন্দোলনকারীদের পালটা প্রশ্ন, ইমারজেন্সি বিভাগের ভিতরে ঢুকে কোনওভাবে তারা সেমিনার হলের সামনে গিয়ে কোনও প্রমাণ লোপাট করেনি তো? কারণ প্রায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ ঢুকে গিয়েছিল এদিন রাতে ইমার্জেন্সি বিভাগের ভিতরে। এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে যে সমস্ত চেয়ার বা আন্দোলনকারীদের মঞ্চ ছিল তাও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ ঘটনার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে লাঠি চার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে গোটা ইমার্জেন্সি বিভাগ কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে৷ জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি, লড়ি করে একদল আরজিকরের সামনে চলে আসে লাঠি, রড, পাথর নিয়ে। এরপরই শুরু হয় মারধর, ভাঙচুর। জখম হন বেশ কয়েকজন। অভিযোগ, পুলিশ শুরুতেই পদক্ষেপ নিলে এ ঘটনা ঘটতো না। গোটা ঘটনায় বাম–বিজেপি এককাট্টা হয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠতে শুরু করেছে।