অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে যিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি সোনার পদক পান৷ সেই সোনার পদক্টি কি খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি? প্রাচীন ও সাম্প্রতিক অলিম্পিক্সের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে যদি দেখা যায় তাহলে এই প্রশ্নের আলাদা আলাদা হবে। উল্লেখ্য, প্রাচীন গ্রিসে, অলিম্পিক গেমসের বিজয়ীদের কোনও পদক দেওয়া হত না। পরিবর্তে, প্রতিটি খেলায় বিজয়ী ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিয়ায় একটি অলিভ পাতার তৈরি মালা দেওয়া হত৷ সেই ঐতিহ্য অব্যাহত ছিল ১৮৯৬ সালে প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমসেও। ১৯০৪ সালে প্রথমবারের মতো পদক দেওয়া হয়, এখন যেভাবে পদক দেওয়া হয় সেটা শুরু হয়েছিল ১৯০৪ সালে৷ সেবার সেন্ট লুইসে অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়েছিল। প্রতিটি ইভেন্টে সেরা তিন খেলোয়াড়কে সোনা, রূপো এবং ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়েছিল৷
প্রশ্ন আসতেই পারে, অলিম্পিকের সোনার পদক কি পুরোটাই খাঁটি সোনার? যদি সোনার হয় তাহলে তার ওজন কত? আইওসি-র বক্তব্য অনুযায়ী অলিম্পিকের সোনার পদকে সোনার পরিমাণ আসলে মাত্র ৬ গ্রাম। পদকের ওজন ৫৫৬ গ্রাম।আর বেশির ভাগটাই রুপো যার পরিমান ৯২.৫ শতাংশ। এই সোনার পদকটির দাম ৮০০ ডলার। ২০২১ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের আসরে একটি সোনার পদকের মূল্য তাই ছিল। আমাদের দেশের মুদ্রায় যার দাম প্রায় ৯৪ হাজার টাকা বা তার একটু বেশি। তবে রুপোর পদকের পুরোটাতেই খাঁটি রুপো থাকে। যার ওজন ৫৫০ গ্রাম। দাম ৪৫০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫৩ হাজার টাকা। ব্রোঞ্জপদকে ৯৫ শতাংশ তামা এবং ৫ শতাংশ দস্তা থাকে। দাম মাত্র ৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫৮৭ টাকা। একটা সময় পর্যন্ত অলিম্পিকে কিন্তু সোনার পদকে কোনো খাদ থাকত না। ১৯১২ সালের স্টকহোম অলিম্পিক পর্যন্ত সোনার পদক হতো পুরোটাই সোনা দিয়ে তৈরি হত। মাঝখানে একবার ১৯০৪ সালের সেন্ট লুইস অলিম্পিকে বিজয়ীদের সোনার তৈরি ছোট্ট একটি ট্রফি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খাঁটি সোনার বিষয়টি দিনে দিনে বেশি খরচার হয়ে ওঠায় আইওসি সেই পথ থেকে সরে আসে।
আরও একটি প্রশ্ন, অলিম্পিকে পদক জেতার গর্ব আর চকচকে ওই পদক ছাড়া আর কোনো কিছু কি প্রতিযোগীরা পেয়ে থাকেন? এর জবাবে এটুকু বলাই যায় যে ঐতিহ্যগতভাবে অলিম্পিক মানে অপেশাদারি মানসিকতা। এখানে সবাই গৌরবের সন্ধানেই অংশগ্রহণ করে, অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করাটাই মুখ্য বিষয়, সম্মানই বড় কথা। তবে এবার দুটি ইভেন্টের অ্যাথলেটরা অর্থ পাবেন। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, প্যারিস অলিম্পিকে ৪৮টি ইভেন্টের সোনাজয়ীদের সবাইকে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দেবে তারা। এর পর আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) মে মাসে ঘোষণা করেছে শুধু সোনাজয়ী নন, প্যারিস অলিম্পিকে যেকোনো পদক জিতলেই অর্থ পুরস্কার দেবে তারা। প্যারিসে বক্সিংয়ে সোনাজয়ীরা পাবেন ১ লাখ ডলার যার ৫০ হাজার ডলার পাবেন বক্সার আর বাকিটা দুভাগ করে দেওয়া হবে দেশটির ফেডারেশন ও কোচের মধ্যে। এর বাইরে বিভিন্ন দেশ তাদের অ্যাথলেটদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা করেছে। মালয়েশিয়া, মরক্কো ও সার্বিয়ার মতো দেশ পদকজয়ীদের ২ লাখ ডলার পর্যন্ত পুরস্কারের ঘোষণা করেছে। ইতালিও বলেছে পদকজয়ীদের ১ লাখ ডলার দেওয়া হবে।
এদিকে আমেরিকা একদম নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছে, কোন পদকের জন্য কত অর্থ দেবে তারা। ব্রোঞ্জ জিতলে আমেরিকান অ্যাথলেট পাবেন ১৫ হাজার ডলার। সাড়ে হাজার ডলার পাবেন রুপো জয়ীরা। আর সোনার পদকের সঙ্গে মিলবে সাড়ে ৩৭ হাজার ডলার। আমেরিকার অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে টাকার অংকটা কম হলেও গ্রহণযোগ্য, কারণ এই অ্যাথলেটদের অধিকাংশই ক্যারিয়ারের শুরু থেকে কোনো না কোনো ব্র্যান্ডকে স্পনসর হিসেবে পান।