কলকাতা ব্যুরো: যাত্রী সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করে আগামী মাসের শুরু থেকে ধাপে ধাপে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হলে তাঁর কোন আপত্তি নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন। নবান্নে আজ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার এব্যাপারে রেলের সঙ্গে কথা বলতে রাজি আছে। পাশাপাশি কোভিড প্রবণ ৬ শহর থেকে সপ্তাহে তিন দিন করে বিমান চলাচল শুরু করার ব্যাপারেও তিনি আজ ছাড়পত্র দিয়েছেন।
উল্লেখ্য আগামী ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে গোটা দেশে আনলক ফোর পর্ব শুরু হচ্ছে। এই পর্বে রেল সহ গণ পরিবহণ আরো কিছুটা স্বাভাবিক করে তোলার ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরেই পাতালপথে যাত্রী নিয়ে ছুটবে কিনা মেট্রো সেই সবুজ সংকেত এখনও রেলবোর্ড থেকে আসেনি। কিন্তু আচমকাই মেট্রো চালানোর নির্দেশ এলে পরিষেবা কিভাবে সচল রাখা হবে সেবিষয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি রাখছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের বড় চিন্তা, মেট্রোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী চাপ সামাল দেওয়াটাই। সেক্ষেত্রে যাত্রী ওঠা নামার সময় নজরদারি প্রয়োজন। প্রতি মেট্রোর প্রতি কামরায় সেই নজরদারি করবে কে! কারণ ওই বিপুল সংখ্যক আরপিএফ মেট্রোর হাতে নেই। যারা আছেন, তাদের বেশ কয়েকজন আবার করোনায় আক্রান্ত। একটা বড় অংশ কোয়ারেন্টিনে। তাই কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যাত্রীদের আরো সচেতন হতে হবে। নিজের ভালো নিজে বুঝে ভিড় এড়াতে হবে। মেট্রো সব ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার ভিডিও যাবতীয় সব কিছু করবে।
তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, একদম শুরুতে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিয়েই ছুটবে মেট্রো। প্রতি স্টেশনে দাঁড়াবে ৪০ সেকেন্ড। কোচে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী হয়ে গেলেই অতিরিক্ত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে টোকেন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শুধু স্মার্টকার্ড পরিষেবাই চালু রাখা হবে। ইতিমধ্যেই মেট্রোর কাউন্টারে ভিড় এড়াতে অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড অনলাইন রিচার্জ শুরু হয়েছে। দিনের কোন সময় কি ব্যবধানে মেট্রো চলবে তাও জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেট্রো পরিষেবা শুরুর বিষয়ে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মিনিস্ট্রি অফ হোম অ্যাফেয়ার্স ও রেল মন্ত্রকের নির্দেশ পাওয়ার পরই আমরা মেট্রো চালানো নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করব। মেট্রো সমস্ত দিক থেকে প্রস্তুত পরিষেবা শুরু করতে।”
মেট্রোসূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক পরে স্টেশনে ঢুকতে হবে। স্টেশনে প্রবেশের আগে সকলের থার্মাল স্ক্যানিং হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে যাত্রীকে আর স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে প্ল্যাটফর্ম এবং টিকিট কাউন্টারের বাইরে হলুদ দাগ দিয়ে যাত্রীদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা থাকছে। এক মিটার অন্তর দাঁড়াতে হবে তাদের। স্টেশনে থাকা কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা প্রত্যেকেই পিপিই পড়ে কাজ করবেন। হাতে থাকবে গ্লাভস। কর্মীদের কোনভাবে যাত্রীদের সঙ্গে হাত মেলানো বা সংস্পর্শে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
মেট্রো সূত্রে খবর এতদিন একই গেট দিয়ে যাত্রীরা প্লাটফর্মে ঢুকতেন আবার বেরোতেন। কিন্তু এবার থেকে মেট্রোর এন্ট্রি এবং এক্সিট গেট আলাদা করা হচ্ছে। যাত্রীদের
প্রবেশ ও প্রস্থানের মূল গেটে কর্তব্যরত আরপিএফ এবং প্ল্যাটফর্মের আরপিএফরা সব সময় ওয়াকিটকির মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করবেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী প্লাটফর্মে হয়ে গেলে সেখান থেকে মূল গেটে থাকা রেল পুলিশকে তা জানানো হবে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে মূল গেট।
মেট্রো বা লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে ছাড়পত্র দিলেও আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে স্কুল কলেজ বন্ধই থাকবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খলা ভাঙতে আগামী মাসেও সাপ্তাহিক সম্পূর্ণ লক ডাউনের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যাওয়া হবে । ওই মাসের ৭,১১ এবং ১২ তারিখে সম্পুর্ন লক ডাউন থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি দিনক্ষণ পরে ঠিক করা হবে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।