৯ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর। আরজি কর কাণ্ডের জেরে প্রতিবাদে উত্তাল রয়েছে গোটা রাজ্য টানা একটা মাস ধরে। কিন্তু যার জন্য এত প্রতিবাদ আন্দোলন সে বিচার মিললনা এখনও। গত ৫ তারিখের দেশের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ছিল কিন্তু তা পিছিয়ে হয়েছে ৯ তারিখ। তাই তার আগের দিন ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার আবার রাত জাগার ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। উল্লেখ্য, গত ১৪ অগাস্ট যে রিমঝিম সিংহের ডাকে পথে নেমেছিলেন গোটা রাজ্যের মানুষ। সেই মেয়েদের রাত জাগা ঐতিহাসিক করে তুলেছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। ফের রাত জাগার ডাক। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শাসকের ঘুম ভাঙাতে নতুন গানের ভোর’। এই কর্মসূচি অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির মতো। গুপী গাইন যেমন রাজার ঘুম ভাঙিয়েছিলেন, সে ভাবেই শাসকদের ঘুম ভাঙাতে চান মানুষ। রাত দখল হবে সাংস্কৃতিক আঙ্গিকে। গানের দল, নাচের দল, সাংস্কৃতিক জগতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে এই কর্মসূচিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম থেকে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তার পর কেটে গিয়েছে এক মাস। সিবিআই তদন্ত করছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি রয়েছে। ঠিক তার আগের রাতেই পথে নামবেন আন্দোলনকারীরা। এই ঘটনার সুবিচারের দাবিতে ১৪ আগস্ট স্বাধীনতার মধ্যরাতে ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ড এবং কলেজ স্কোয়্যার – এই তিন জায়গায় মহিলাদের জমায়েতের কথা বলা হয়েছিল। তাঁকে ব্যাপক সাড়া মিলেছিল। প্রায় গোটা রাজ্যে প্ল্যাকার্ড, মোমবাতি হাতে পথে নামেন অগণিত মহিলা। তাতে শামিল হন পুরুষরাও। এর পর গত বুধবারও ‘রাত দখল’ হয়। এবার সেই একই দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে ‘রাত দখলে’র ডাক।
১ মাস হয়ে গেল আন্দোলনের। এখনও কেন সুবিচার পেলেন না নির্যাতিতা তার দাবিতেই আজ ফের রাত জাগা। আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমে পাওয়া তরুণী চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এমনকী পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সেই ঘটনার প্রতিবাদে গোটা রাজ্য উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই বিপুল সাড়া দেখা গিয়েছে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সকলে। প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সমাজের সবস্তরের মানুষ। সিবিআই তদন্ত শুরু করে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করলেও চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনই গ্রেফতার রয়েছেন। আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। এখনও বিচার পেলেন না নির্যাতিতা তারই প্রতিবাদে রবিবার ফের রাত দখলের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। জেলা থেকে শহর সর্বত্র চলছে প্রতিবাদ কর্মসূচি। সুপ্রিম শুনানির আগের দিন রাতে তাই রাজ্যের সর্বত্র এই রাতের জমায়েতের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। যতদিন না নির্যাতিতার পরিবার ন্যায় বিচার পাচ্ছেন সর্বত্র এই প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এবার শুধু মিছিল বা স্লোগান নয়, কবিতা-গান-নাচের মাধ্যমে হবে প্রতিবাদ। পাহাড় থেকে সাগর, সারা বাংলা জুড়ে এই কর্মসূচির নাম ‘নতুন গানের ভোর’। শাসকের ঘুম ভাঙানোর জন্যই তাঁদের এই কর্মসূচি। এই রাজ্যের সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও ব্যান্ডকে সুবিধা মতো জায়গায় সারারাত কবিতায়, গানে, নাচে প্রতিবাদ জানানোর আবেদন করা হয়েছে। অর্থাৎ, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে রাত জাগবে বাংলা। রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করতে চলেছেন সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের। এদিকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে এর আগে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। কিন্তু এই প্রথম শাসকদলের কোনও সাংসদ ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জহর। ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে সাসপেন্ড করা হল পরিচালক অরিন্দম শীলকে। শোনা যাচ্ছে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে পরিচালকের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।