বুধবার রাতে বুকে অস্বস্তি নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছেন এক ব্যক্তি। তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি কোনও হাসপাতালে।অবশেষে তিনি ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু তার আগে ছ’টি হাসপাতাল তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে।অবশেষে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়।ওই অসুস্থ ব্যক্তির নাম অভিজিৎ মণ্ডল। তিনি কলকাতার টালা থানার ওসি। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর তাঁর নামটি চর্চায় এসে পড়েছে। তাছাড়া সাধারণত কোনো থানার ওসির নাম নিয়ে লোকে বিশেষ চর্চা করে না।
আরজি কর হাসপাতাল টালা থানার অধীনে। ধর্ষিতা এবং নিহত চিকিৎসকের মামলাও টালা থানায় রয়েছে। ইতিমধ্যে থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা টালা থানার কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং অনেক প্রশ্নও তুলেছেন। কেন ময়নাতদন্তের আগে পুলিশের খাতায় অস্বাভাবিক মৃত্যু লেখা হয়েছিল সেই প্রশ্নও উঠেছে। অর্থাৎ ঘটনা নিয়ে তেমন সদর্থক কোনও ভূমিকাই পালন করেনি টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। এমনকী আরজি কর দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আগেও টালা থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী নাম কে ওয়াস্তে তদন্ত করে অভিযুক্তদের ক্লিনচিট দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে আরজি কর মেডিক্যালে দুর্নীতির তদন্তেও শুরু করেছে সিবিআই। তারই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অসুস্থ পড়েন তিনি।
ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু কোনও হাসপাতালেই দীর্ঘক্ষণ ভর্তি হতে পারেননি তিনি। দমদম থেকে ইএম বাইপাস, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়েননি তিনি। সকাল ১০টা থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান অভিজিৎবাবু। দাবি করতে থাকেন, তাঁর বুকে ব্যথা করছে। তবে কোনও হাসপাতালের চিকিৎসকরাই তাঁকে ভর্তি নেওয়ার মতো কোনও উপসর্গ খুঁজে পাননি। সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ছিল স্বাভাবিক। কয়েকটি জায়গা থেকে তাঁকে আরও বড় হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অবশেষে রাত ৯টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন অভিজিৎ মণ্ডল। তাঁর উদ্বেগ ও ডিহাইড্রেশনের উপসর্গ রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এরপরই শ্যামপুকুর থানার অ্যাডিশনাল ওসি মলয় দত্তকে টালা থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতারাতি টালা থানায় নতুন ওসি নিয়োগ করে লালবাজার। টালা থানার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্যামপুকুর থানার অতিরিক্ত ওসি মলয় দত্তকে। শুক্রবার থেকে ওই দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
আর জি কর কাণ্ডের পর কলকাতার ‘মিছিল নগরী’ নাম সার্থক। তরুণী চিকিৎসকের সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছেন তাঁর সহ নাগরিকরা। শনিবারও তেমনই এক মিছিল বেরচ্ছে শহরে। যার উদ্যোক্তা নেটিজেনরা। ডাক, ‘চলুন, দেখা করে আসি।’ তিনি কেমন আছেন? খবরাখবর নিতে তাই শনিবার মিছিল বের করছে নাগরিক পক্ষ। মিছিলের প্রচারে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে লেখা, ‘সুপ্রিম কোর্টের পরের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে শুনে টালা থানার ওসি নাকি অসুস্থ? চলুন, দেখা করে আসি (অ)সুস্থ ওসির সাথে’। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই মিছিলে কোনও রকম রাজনৈতিক দল থাকছে না। নাগরিক সমাজের পক্ষে হবে মিছিল। মূলত যাদবপুর এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে এই মিছিলে জমায়েত হবেন মানুষ। সেইসঙ্গে তারা আরও জানিয়েছেন, “স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা এড়াতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেই কারণেই আমরা মিছিল ডেকেছি।” প্রথমে জমায়েতের স্থান গোলপার্ক করা হলেও পরে সেই স্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে এক্সাইড মোড়ে করা হয়েছে।
তিলোত্তমার বিচার চেয়ে এর আগে মেয়েদের রাত দখল দেখেছে রাজ্য। মানববন্ধন করে অভিনব প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। কলেজস্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডানের সমর্থকরা। পথে নেমেছেন সঙ্গীতমহল থেকে শুরু করে সিনেমামহল। একের পর এক সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন বিশিষ্টরা। আর এবার পথে রিকশাচালকরা।আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে এবার পথে নামছেন রিকশাচালকরা। এর আগে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন বহু মানুষ। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলেছেন সমাজের সব ক্ষেত্রের মানুষরা। এবার সোচ্চার হবেন রিকশাচালকরা। রবিবার হেদুয়া থেকে কলেজস্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল করবেন রিকশাচালকরা। বিকেল চারটে থেকে এই মিছিল শুরু হবে।