বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিশেষ বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় জানা যায় যে তা হচ্ছে না। গোটা রাজ্য থেকে শুরু করে সমগ্র দেশে তোলপাড় ফেলে দেওয়া এই ঘটনার তদন্ত কোন পথে তা সিবিআইকে রিপোর্ট আকারে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চকে জানাতে হবে একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে এই সংক্রান্ত ঘটনায় স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিতে হবে- দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল।
বুধবার সন্ধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ ৫ সেপ্টেম্বর(বৃহস্পতিবার) বসবে না। তবে একথা বলা ছিল যে ওই বেঞ্চের বাকি দুই বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র আলাদা করে ১০ নম্বর কোর্টের কয়কটি মামলা শুনতে বেঞ্চে হাজির থাকবেন। কিন্তু তাঁরা কোন কোন মামলার জন্য বেঞ্চে বসবেন, সে বিষয়ে কিছুই স্পষ্ট করে জানানো ছিলনা। ফলে আরজি কর মামলার শুনানি নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আগে থেকেই তৈরি ছিল। প্রথম বিজ্ঞপ্তির কিছু সময় পরে সর্বোচ্চ আদালত থেকে দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় যেখানে ১০ নম্বর কোর্টের মামলার নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় দেখা যায়, আরজি করের মামলাটির কোনো উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চেও শুনানি হচ্ছে না।
দীর্ঘ দিন ধরে আরজি করের বিচারের দাবিতে দিন গুনছিলেন সাধারণ মানুষ। এই শুনানির দিকেই তাকিয়ে ছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা এবং অবশ্যই নির্যাতিতার মা-বাবা। কিন্তু শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁরা হতাশ।শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে নাগরিক সমাজের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা পিছয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সুপ্রিম কোর্টের এই মামলার শুনানির দিকে তাকিয়ে ছিল আপামর জনতা। আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা শুনানির আগে রাত জাগা কর্মসুচির ডাক দিয়েছিল। একই সঙ্গে রাত ৯ টার সময় বিশেষ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল। বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আরও এক রাত দখল করেন মহিলা পুরুষ। কিন্তু ঠিক তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর সংক্রান্ত মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়।
যে ধর্ষণ বা বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষকে। সমাজের প্রতিটি স্তরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে গণতান্ত্রিকভাবে আওয়াজ তুলছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আগ বাড়িয়ে এসে আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের মামলা নিজের হাতে তুলে নেয় তারাই আবার ছন্দপতন ঘটিয়ে দিলো। জুনিয়র চিকিৎসকরা এই আশঙ্কার কথা ভেবেই কী আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি? যে আদালতের অন্য বেঞ্চেও আরজি করের মামলা রাখা হলনা। দ্বিতীয় তালিকাতেও আরজি কর মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়নি সে আদালতে কি তিলোত্তমা সুবিচার পাবে? কিভাবে? কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তিনি অন্য একটি বেঞ্চকে তাঁর এজলাসের মামলা স্থানান্তর করে যান। ওই মামলাগুলির শুনানি ওই বিশেষ বেঞ্চেই হয়। সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রেও এমন হয়। কিন্তু আরজি করের মামলার ক্ষেত্রে এমনটা হল না, কেন হল না?
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টেও তারিখ পে তারিখের ঐতিহ্য বহাল আছে। বিচারের দাবি সার মাত্র কারণ, ঝুলে আছে বহু মামলা। দেশে আইনের শাসন বজায় রাখা এবং সংবিধান রক্ষা করার উদ্দেশে গঠন করা হয়েছিল যে সর্বোচ্চ আদালত সেখানে কতগুলি মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে জানেন? কমপক্ষে সত্তর হাজারের বেশি। দেশে অপরাধের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যাও বাড়ছে লাফ দিয়ে। ২০২৪ সালের গোড়াতে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০,২২১। এই পেন্ডিং মামলাগুলির মধ্যে অধিকাংশই সিভিল এবং অপরাধমূলক মামলা। এছাড়া রয়েছে সাংবিধানিক, জনস্বার্থ মামলা, বিভিন্ন আবেদন। বছরের পর বছর ধরে মুলতুবি হয়ে পড়ে রয়েছে এই মামলাগুলি।