উত্তাল শহর, উত্তাল বাংলা, উত্তাল গোটা দেশ। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনে গর্জে উঠেছে সমগ্র চিকিৎসক সমাজ, তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের হাত বাড়িয়ে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এমন আন্দোলন এই শহর আগে কখনও দেখেছে বলে মানুষ মনে করতে পারছেন না। কলকাতা নগরী এত ধরনের স্লোগানে কোনোদিন মুখর হয়েছে কিনা তাও মনে করতে পারেন না মানুষ। কেবল কলকাতা বা শহরতলী নয়, “we want justice” কিংবা “তিলোত্তমার বিচার চাই” এই আওয়াজ ভাসছে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জেলা শহর ও গঞ্জের হাটে মাঠে পথে। কে বলে এই প্রজন্ম কেবলমাত্র মোবাইল ফোন আর নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই বুঁদ হয়ে থাকে! বহুদিনের ধারণাকে গুড়িয়ে দিয়ে আগামীর স্বপ্নকে সফল করতে আজ তারাই পথ দেখাচ্ছে।
মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে অন্ধকারে ডুবল শহর কলকাতা। বৈদ্যুতিন আলো নিভিয়ে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বেলে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার এই ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা। আর সেই প্রতিবাদে সামিল হল ‘তিলোত্তমা’। ঘড়ির কাটায় ঠিক রাত ৯টা বাজতেই সমস্ত আলো নিভে গেল। বাইপাস সংলগ্ন একাধিক বহুতলে লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালেরও, প্রতিবাদে সামিল হয় রাজভবনও। এমনকি বহু জায়গায় স্ট্রিট ল্যাম্পও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন প্রতিবাদের ছবি শহর কলকাতায় আগে দেখা গিয়েছে কিনা তা কেউ মনে করতে পারছেন না।
কেবল শহরের লাইট বন্ধ করে প্রতিবাদই নয়। আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদ চেয়ে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। টালা থেকে টালিগঞ্জ, কোচবিহার থেকে কলকাতা- সর্বত্রই ছবিটা এক। কারোর হাতে মোমবাতি তো কারও হাতে প্ল্যাকার্ড।’ওই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যানারও দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বহু মানুষকে গান গাইতেও দেখা দেখা যায়। অন্যদিকে আরজি কর হাসপাতালেও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা সেই প্রতিবাদে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সামিল হন ‘অভয়া’র বাবা-মা। হাজির হন পরিবারের আত্মীয়রাও। মোমবাতি হাতে নিয়েই মেয়ের বিচারের দাবিতে স্লোগানে গলা মেলান। তাঁদের ঘিরে থাকেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা। এক অন্য ধরনের ছবি আরজি কর হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে।
নানা জায়গায় যখন আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদ চলছে তখন আচমকা মিছিলে হামলা, মারধর প্রতিবাদীদের। এমনকি জাস্টিস ফর আরজি করের ‘গ্রাফিতি’ও মুছে দেওয়া হয়। এই ঘটনা ঘটে কোচবিহারের মাথাভাঙায়। হামলায় অভিযোগের তির তৃণমূলে দিকে। শুধু কলকাতা নয়, জেলাতেও এদিন দলে দলে রাত দখল করেন মহিলারা। কেউ মোমবাতি মিছিল তো কেউ কেউ একজোট হয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান তুলছেন। তেমনই বিচারের দাবিতে এদিন রাত ৯ টা থেকে পথে নামেন কোচবিহারের মাথাভাঙার মানুষ। কেউ বিচার চেয়ে রাস্তায় ছবি আঁকছিলেন তো কেউ আবার সুবিচারের দাবিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। এই প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন বহু বয়স্ক মানুষও। হঠাত করেই একদল যুবক সেখানে হামলা চালায়। প্রতিবাদীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি বয়স্ক মানুষদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শিল্পী। তাঁদেরও মারধর করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শ্যামবাজারে তাঁকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় কোনওক্রমে গাড়িতে উঠে এলাকা ছাড়েন অভিনেত্রী। বুধবার সন্ধে থেকে শ্যামবাজারের পাঁচমাথা মোড়ে আন্দোলনে শামিল হন অগণিত মানুষ। প্রায় মধ্যরাতে সেখানে পৌঁছন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সেখানে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুবিচারের দাবিতেই সুর চড়িয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকা তেতে ওঠে। অভিনেত্রীকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’, ‘ধিক্কার’ স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। কোনওক্রমে গাড়িতে গিয়ে ওঠেন অভিনেত্রী। তাতেও পরিস্থিতি সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। গাড়ি ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। কোনওক্রমে এলাকা ছাড়েন ঋতুপর্ণা।