দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আর জি কর মামলার শুনানিতে ফের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হল রাজ্য।সিবিআই এবং অন্যান্য আইনজীবীদের তরফে নির্যাতিতার শরীরের নমুনা সংগ্রহ এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে একাধিক যুক্তি দেওয়া হল। এদিন সিবিআই মুখবদ্ধ খামে যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে, সেই রিপোর্ট নিয়ে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তিনি বলেন, “যাতে তদন্তে প্রভাব পড়ে, ওপেন কোর্টে কিছু মন্তব্য করতে চাই না। আগামী সোমবার তদন্তের আবার স্টেটাস রিপোর্ট দিন।” আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ফের স্টেটাস রিপোর্ট দেবে সিবিআই। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
যদিও এদিন এই মামলায় প্রাথমিক তদন্ত নিয়ে রাজ্যকে একাধিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছে সিবিআই। তবে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ কাজে যোগ দেওয়ার সময়ও বেঁধে দেয়। বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কী বলছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাঁরা। তবুও, সব দিক খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সব চিকিৎসককে নিয়ে একটি জেনারেল বডি মিটিংয়ের পর জানিয়ে দেওয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচি। তবে মামলার শুনানিতে হতাশ হয়েছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করবেন তাঁরা। পরবর্তী সিদ্ধান্ত এখনও স্থির করেননি তাঁরা। আপাতত প্রতিটি কলেজ এবং হাসপাতালের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা পৃথক পৃথক ভাবে একটি প্রাথমিক বৈঠক করবেন। এর পর বিকাল ৫টা নাগাদ আরজি কর-সহ সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা মিলে একটি সম্মিলিত জেনারেল বডি বৈঠক (জিবি) করবেন। সেই বৈঠকের পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আরজি করে চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। আরজি করের সামনেও চলছে অবস্থান। রাজ্য সরকারের তরফে বার বার তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানালেও জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফেরেননি। সোমবারের শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ উঠলে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানায়, অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে হবে চিকিৎসকদের। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ হবে না, আমরা তো বলেছি। আগামী কাল বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এর পরেও যদি কোনও চিকিৎসক কাজে যোগ না দেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে আমরা বাধা দিতে পারব না।’’ পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানায়, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা জেনে, তবেই পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে আবারও জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ-ও জানান, প্রয়োজনে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাতেও বসবেন তিনি। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মমতা বললেন, “ প্রতি দিন রাতে আপনারা যদি রাস্তায় থাকেন, অনেক মানুষের তো সমস্যা হয়। অনেক এলাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন। আলো লাগালে, তাঁদের ঘুমের সমস্যা হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মও রয়েছে রাত ১০টার পর মাইক বাজানো নিয়ে। তা সত্ত্বেও তো আমরা সব ছেড়ে দিয়েছি। এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন।”
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক পুজো কমিটি রাজ্য সরকারের দেওয়া পুজো অনুদান ফেরত দিয়েছে। এবার এই পুজো অনুদান নিয়ে কার্যত কড়া অবস্থান নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তিনি জানিয়ে দেন অনেক ক্লাব অনুদান নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। যারা টাকা নিতে চান না ভালো নেবেন না। আমরা সেই টাকা অন্যদের দিয়ে দেব। পুজোর অনুদান দিতে রাজ্য সরকারের মোট ৪৫০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।