সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা, উলটে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে স্বাস্থ্যভবন ঘেরাও করে বসে রয়েছে। তিন স্বাস্থ্য কর্তার পদত্যাগের দাবি নিয়ে সাফাই অভিযানে নেমেছে তারা, তিলোত্তমার সুবিচার তো আছেই তার সঙ্গে স্বাস্থ্যভবন সাফাই অভিযানে নেমেছে প্রতিবাদীরা। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।
অর্থাৎ ‘ডেডলাইন’ বনাম ‘ডেডলাইন’ নতুন এক সংঘাতের আবহেই স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যতক্ষণ না তাঁদের দাবিপূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে বলে জানানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ডেডলাইন নয় তাই সেই ডেডলাইন পেরিয়ে গেলেও কাজে ফেরেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে তারা ধরনায় বসেছেন। যতক্ষণ না দাবিপূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা চলবে। স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ইস্তফা দিতে হবে। আর তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে সরকারকে। তাদের মিছিল স্বাস্থ্য ভবন থেকে ১০০ মিটার দূরেই আটকে দেওয়া হয়। ‘স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযান’-এ যোগ দেওয়া জুনিয়র ডাক্তাররা সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েছেন। লালবাজার অভিযানের পুনরাবৃত্তি বলা যায়।
বলা যায় চাপ, পাল্টা চাপের কৌশল চলছে আর জি কর কাণ্ডে আন্দোলনকারী এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযানে তাদের সঙ্গে রয়েছে প্রতীকী মস্তিষ্ক এবং প্রতীকী চোখ। এর আগে, লালবাজার অভিযানের সময়ও প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে হেঁটেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের হাতে পদত্যাগের দাবিপত্র তুলে দেওয়ার সময়ও টেবিলে বসানো ছিল সেই মেরুদণ্ড। এবার প্রতীকী মস্তিষ্ক এবং প্রতীকী চোখ ব্যবহারের পক্ষে যে যুক্তি উঠে এসেছে, তা হল, ‘স্বাস্থ্যভবন সাফাই অভিযান’। জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় যে ময়লা, দুর্নীতি এবং আবর্জনা রয়েছে, তা পরিষ্কার করাই লক্ষ্য তাঁদের। সেই জন্যই প্রতীকী মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের মডেল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, যাতে মাথা খাটিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় দুর্নীতি, অব্যবস্থার বিরুদ্ধে। জুনিয়র চিকিৎসকরা বলছেন, বিচারেরপক্ষে বুদ্ধির প্রয়োগ করতে হবে বিচারের বিরুদ্ধে নয়। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতেও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, এই প্রতীকী মস্তিষ্ক আসলে স্বাস্থ্য সচিব এবং গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার, যা গত দু’-তিন বছরে ব্যবহার করা হয়নি।
লাল সাদা গোলাপে সাজানো, রজনীগন্ধার মালায় মোড়ানো সেই প্রতীকী মস্তিষ্কের সামনে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘BRAINS For Justice Not against it’, অর্থাৎ বিচারের জন্য মাথা খাটানো হোক, বিরোধিতায় নয়। পাশাপাশি, এতগুলি দিন পেরিয়ে গেলেও, কেন দোষীদের চিহ্নিত করা গেল না, সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠছে, তাঁদের সামনে আনা হচ্ছে না কেন, সেই নিয়ে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চোখ দিয়ে যেন সত্যিটা দেখা যায়। তাই প্রতীকী চোখ নিয়ে অভিযান করছেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। ওরা যেটা করছে, দেখতে পাচ্ছি আমরা, দেখতে পাচ্ছেন আমজনতা, সকলেই দেখতে পাচ্ছেন।”
সাফাই অভিযানে ঝাড়ু নিয়েও শামিল হয়েছেন অনেকে। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্য বলেন, “অনেকে বলছিলেন, পুলিশকে তো শিরদাঁড়া দিলে, নিজেদের ডিপার্টমেন্টে যে দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধে কবে সরব হবে? আজ সেই সরব হওয়ার দিন।” ছোটবেলায় ‘সহজ পাঠে’ যে মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিনের কথা পড়েছিলেন, আজ এই মঙ্গলবারে স্বাস্থ্যভবনে সেই সাফাই অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। মোট ছয় দফা দাবি নিয়ে এদিন স্বাস্থ্যভবন অভিযান করেন জুনিয়র চিকিৎসকরে। তাঁরা পদত্যাগ চেয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার। সিন্ডিকেট ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত ও শাস্তি, চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং থ্রেট কালচারের অবসান চেয়েছেন। বিকেল ৫টার মধ্যে সরকার পদক্ষেপ করলে কর্মবিরতি তোলার আবেদন ভেবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, বিকেল ৫টার পরও স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকরা ভিতরে অপেক্ষা করছেন, যাতে জুনিয়র চিকিৎসকরা এলে কথা বলা যায়। জুনিয়র চিকিৎসকরা যদিও জানিয়েছেন, সরকারের তরফে কথা বলতে চাইলে, আন্দোলনস্থলে এসে কথা বলতে হবে।