জীবনে খ্যাতির শীর্ষে থাকা অনেক নারীই প্রাচুর্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। প্রচুর ধনসম্পদ আর প্রতিপত্তির মধ্যে স্বাচ্ছন্দে জীবন পার করলেও কিন্তু জীবনে তারা প্রকৃত সুখের সন্ধান পাননি। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই পরিণত হয়েছেন রহস্যে। রহস্যময় জীবনের তেমমনই এক নারী হলেন ডরোথি আরনল্ড। অতীত দিনের তারকাদের রঙিন বা সাদাকালো পর্দা কোনোটির সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ ছিল না। কারণ তাঁর সময় এগুলির উদ্ভবই হয়নি। সেই সময় বিখ্যাত বলতে যা বোঝানো হত তা হল রাজপরিবার অথবা বড় ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য। ডরোথি আরনল্ড ছিলেন তেমনই এক বিখ্যাত পারফিউম ব্যবসায়ীয় মেয়ে।

তিনি ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিরাট ব্যবসায়ী পরিবারের একটি অংশ হওয়ায় উত্তরাধিকারীও ছিলেন তিনি। তবে আধুনিক জীবন খুব একটা পছন্দ করতেন না ডরোথি। সাধারণ জীবনই তাকে বেশি আকর্ষণ করত। ব্রায়ান মোর কলেজ থেকে সাহিত্য বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে তিনি লেখালেখিতে মন দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই জগতেও তিনি সাফল্যের দেখা পান নি। পরপর তাঁর দুটি লেখা প্রকাশককেরা বাতিল করে দিলে তিনি ভীষণ ব্যথিত হন। ঠিক সেই কারণেই কিনা জানা যায়নি, মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটির একটি রাস্তা থেকে ডরোথি চিরকালের মতো নিখোঁজ হয়ে যান। সেই দিনের পর থেকে আর কখনো তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

যেদিন ডরোথি তাঁর পরিচিত দুনিয়া থেকে চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়ে গেলেন, সেদিন তিনি বাড়ি থেকে বেরীয়েছিলেন রাত ১১টা নাগাদ। তাঁর আগে তিনি তাঁর মাকে বলেছিলেন, একটি অনুষ্ঠানের জন্য তিনি গাউন কিনতে যাচ্ছেন। আর সেই গাউন কিনতে তাঁর প্রায় সারাটা দিনই লেগে যাবে। মিসেস আরনল্ড জিজ্ঞেস করেছিলেন ডরোথি কাউকে সঙ্গে নিতে চায় কি না। তাঁর মেয়ে না বলেছিলেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ডরোথি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি মাফলার পরেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডরোথি এলাকার একটি চকোলেটের দোকান থেকে কিছু চকোলেট কেনেন। সেখান থেকে ফিফথ অ্যাভেনিউ অ্যান্ড টুয়েন্টি সেভেনথ স্ট্রিটের ব্রেনটানোস বুকস্টোরে গিয়ে একটি বই কেনেন। দুটি দোকানেই দুটি জিনিস তিনি আরনল্ড পরিবারের নামে কিনেছিলেন। দোকান থেকে বেরনোর পর তাঁর সঙ্গে দেখা হয় বন্ধু গ্ল্যাডিস কিংয়ের সঙ্গে। শেষবারের মতো ডরোথিকে জীবিত অবস্থায় তিনিই দেখেছিলেন।

নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দিন ডরোথির আচরনে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি কারও। তবে যে পোশাক কেনার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তা তিনি কেনেননি। ধারণা করা হয়, তিনি বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন অথবা যে পরিকল্পনা করেছিলেন সেটিকে বাস্তব রূপ দিতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করছিলেন। ডরোথি নিউ ইয়র্কের বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে কারও না কারও চোখে অবশ্যই পড়ত। ঘটনার দিন রাতে যখন ডরোথি বাড়ি ফিরলেন না তখন তাঁর পরিবার থেকে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সব বন্ধুদের সঙ্গেই। কিন্তু কেউই তাঁর কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। এমনকি সেই সন্ধ্যায়, ডরোথির এক বন্ধু তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়িতে ফোন করলে মিসেস আরনল্ড তাঁকে জানান, ডরোথির মাথাব্যথা করছে, সে শুয়ে আছে। আসলে তাঁর নিখোজ হওয়ার ঘটনা বাড়ির লোক বাইরের কাউকে জানাতে চাননি। এমনকি পুলিশকেও না। শুধু ডাকা হয় ছেলে জনের বন্ধু আইনজীবী কেইথকে। বাড়ি এসে কেইথ ডরোথির ঘর ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু সন্দেহ করার মতোই কিছুই পায়না। ফায়ারপ্লেসে কিছু কাগজের পোড়া অংশ পড়েছিল যেগুলি পড়ার মতো অবস্থায় ছিল না। তাঁর ঘর থেকে কোনো কিছু হারিয়েও যায়নি যা দেখে বোঝা যায় যে সে পালিয়ে গেছে। তদন্তের স্বার্থে কেইথ বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মর্গেও খোঁজ নেয়। সেখানেও কিছু মেলেনি।

ছ’সপ্তাহ পর ডরোথির পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুলিশ ঘটনাটি জনগণকে জানাতে চাইলে নিষেধ করেন মিস্টার আরনল্ড। তিন দিন পর তিনি সবাইকে জানানোর অনুমতি দেন। নিখোঁজের খবর জানলেও ডোরোথির কোনো খোঁজ মিলল না। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে বেশ কয়েকটি ধারণা করা হলেও সেগুলি নিয়ে কোনো আশার বাণী পাওয়া যায়নি। এর মাঝে একটি ছিল, ডরোথি জুনিয়র গ্রিসকম নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে এনগেজমেন্ট করেছিলেন যেটি তার পরিবার কোনোভাবেই মেনে নেয়নি। তবে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমনকি গ্রিসকম নিজেও ডরোথির নিখোঁজ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও কিছুই জানতে পারেননি। তিনিও জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। আরেকটি কথা বলা হয় যে, পরপর দুটি লেখা প্রকাশকরা বাতিল করায় তিনি ভীষণ মুষড়ে পড়েন এবং আত্মহত্যা করেন। কিন্তু কোথাও তাঁর লাশ বা সুইসাইডাল নোট পাওয়া যায়নি। ডরোথির বাবা বিশ্বাস করতেন তার মেয়ে নিখোঁজ হয়নি, বরং সেন্ট্রাল পার্কের কোথাও তাঁকে হত্যা করা হয়। তবে এই কথারও কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। একটি হাসিখুশি মেয়ে বাড়ি থেকে শপিংয়ের কথা বলে আর কখনো কেন ফিরে এলো না সেই তথ্য আর কোনোদিন জানা যায়নি।
