রবিবার অভয়ার বিচারের দাবিতে ফের পথে নামল কলকাতা। ন’মাস আগে আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক নারকীয় কর্মক্ষেত্রে চরম পরিণতির শিকার হয়েছিলেন। তাঁর জন্মদিনে ফের বিচারের দাবিতে সরব হয় নাগরিক সমাজ। এর আগের বছরগুলিতে এই দিনটা একেবারেই অন্যরকম ভাবে কাটত। মেয়ের জন্মদিনে পায়েস রান্না করে দিতেন তাঁর মা। কিন্তু অভিশপ্ত ৯ অগাস্ট সব কিছুই বদলে দেয়। এবারের জন্মদিনে তিলোত্তমা আর তাঁর মা-বাবার কাছে নেই। ওই চিকিৎসকের করুণ পরিণতি দেখেছে গোটা বিশ্ব। প্রতিবাদ-আন্দোলনে সরব হয়েছিল সমাজ কিন্তু সেই তীব্রতা সময়ের সঙ্গেই কমে গিয়েছে। কিন্তু তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে তাঁর জন্মদিনের দিন ফের পথে নামল কলকাতা।

অভয়া মঞ্চের ডাকে এদিন দুপুর ৩টেয় কলেজ স্কোয়ার থেকে একটি মৌন মিছিল শুরু হয়। মিছিলের গন্তব্য ছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত। মিছিলের শিরোনাম ছিল জন্মদিনের মৃত্যুঋণ। নিহত চিকিৎসকের বিচার চেয়ে ফের রাজপথে জনজোয়ার। মৌন মিছিল করেই প্রতিবাদ জানানো হল। জন্মদিনে প্রয়াত তরুণী চিকিৎসকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে রবিবার একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হয় অভয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে। সোদপুরে অভয়ার বাড়ির খুব কাছেই একটি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। অভয়া ক্লিনিকের আয়োজন করেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক বলেন, আজ অভয়ার জন্মদিন, এই জন্য আমরা তাঁর নামে স্বাস্থ্য শিবির করছি। অনেক মানুষ আসছেন আমাদের শিবিরে। পাশপাশি সন্ধ্যায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে আরও একটি কর্মসূচি হয়। শুধু কলকাতা নয় একইসঙ্গে জেলাতেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় একজনকে দোষী সাব্যস্ত করা আরও অনেকে এর সঙ্গে যুক্ত আছে তাই অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে শিলিগুড়িতে মিছিল করে বামপন্থী একাধিক সংগঠন। রবিবার বাঘাযতীন পার্ক থেকে এই মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।

মেদিনীপুরে অভয়া মঞ্চের প্রতীকী অনশনে সামিল হন পড়ুয়া, শিক্ষক-সহ তেত্রিশ জন। তাঁর স্মরণেই এই অনশন। পাশাপাশি, গরিব মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়েছে এই ক্যাম্প থেকে। জানা গিয়েছে, ফুলের বাগান নির্যাতিতার পছন্দের বিশেষ ছিল। তাই ফুলের চারা গাছও বিলি করা হয় অভয়া মঞ্চ থেকে। সেই চারা গাছ নিতে রীতিমতো ভিড় জমান স্থানীয়রা। অভয়া মঞ্চ থেকে জানানো হয়, এই ঘটনায় একজন নয়, অনেকে জড়িত। কিন্তু সেই রাঘব বোয়ালরা পার পেয়ে গিয়েছে। সাজা পেয়েছে একজন। তাই তারা সেই বাকিদের শাস্তির দাবিতে এই অনশন মঞ্চে সামিল হন। সিবিআইয়ের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শিয়ালদা আদালত আরজি কর ঘটনার মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। অনেকেই এই অপরাধীর ফাঁসি চেয়েছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত ফাঁসির দাবি করেছেন। রাজ্য সরকার ফাঁসির দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করে। কিন্তু তাতে ফাঁসি হয়নি সঞ্জয়ের।

সময় কেটে গিয়েছে। এখন আর সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ নেই। সেই ভিড় হয় না শহরের রাজপথে। কিন্তু তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা আজও তাজা হয়ে আছে। আরজি কর হাসপাতালে ঠিক ৬ মাস আগে এই ৯ তারিখেই ঘটে গিয়েছিল আলোড়ন ফেলা ঘটনা। কদিন আগেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে গিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা মা। তারপর রবিবার জন্মদিন পালন করতে রাস্তায় নামেন। আজ যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে ওই তরুণী চিকিৎসক ৩২ বছরে পা দিতেন। মেয়ের জন্মদিনে সন্তানহারা মা–বাবা বলেন, ‘আগের লড়াইটা ছিল মেয়ের স্বপ্ন পূরণের। ওকে ডাক্তার বানানোর। এখন লড়াই করছি, মেয়ের ধর্ষণ–খুনের বিচারের জন্য।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার অভয়া মঞ্চের তরফে অভয়ার বৃহত্তর পরিবারের কাছে সেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয় লালবাজার থেকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, সিবিআই দপ্তর থেকে স্বাস্থ্য দপ্তর, মেডিক্যাল কাউন্সিলে। অভয়া মঞ্চ-এর বক্তব্য, অভয়াকাণ্ড ঘটে গিয়েছে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির কিছু মানুষের গাফিলতির ফলে। সেই সব লোকের জন্যই কলুষিত হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি। অতএব এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাঁচানোর দায় অভয়া মঞ্চকেই নিতে হবে। তাই অভয়ার জন্মদিনে শামিল হতেই এই আমন্ত্রণ। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনেও আমন্ত্রণ জানাতে যান অভয়া মঞ্চের প্রতিনিধিরা। এসএসকেএম হাসাপাতালের সামনে জড়ো হয়ে একসাথে তারা যান কালিঘাটে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে যেতে দেওয়া হয়নি।
