২য় পর্ব

বিষ্ফোরক-সহ মাইন পুঁতে লাইনের উপর তুলো ও সলতে রেখে তাতে পাথর চাপা দিলেন বিভূতিভূষণ। যাতে অন্য সওয়ারি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়টিও সযত্নে ও সতর্কভাবে দেখে নিলেন। বঙ্গভঙ্গের নাটের গুরু এই কুখ্যাত ছোটলাট ফ্রেজারকে হার্ড টার্গেট করেছে দল। এবারও যেন হাত ফসকে না যায়। এই অপারেশন’ সাকসেসফুল নাহলে পরবর্তী পদক্ষেপে এগোনো মুশকিল। প্রথমবারের টার্গেট প্র্যাকটিশে মস্তবড় ক্ষতি হয়ে গেছে মিশনের। দেওঘরের ডিগরিয়া পাহাড়ে বোমার কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য উল্লাসকর লক্ষ্য বস্তুতে বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যবশত বোমার স্প্লিন্টার ছিটকে বীর বিপ্লবী প্রফুল্ল চক্রবর্তীর দেহে গেঁথে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তাই কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে বিভূতিভূষণের উপরই দায়িত্ব দিলেন বারীণ। আবার প্রফুল্ল চাকীকেই সিলেক্ট করলেন বিভূতিভূষণ।

যাই হোক এবার কাউন্ট ডাউন শুরু। দুজনেই দৌড় শুরু করলেন খড়্গপুর অভিমুখে। শীতের রাতে নির্জন পথে এই দৌড় ছিল মরণপণ। আনুমানিক তিন কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা অতিক্রম করে খানিকক্ষণ থমকে দাঁড়ালেন। স্পষ্ট গাড়ি আসার শব্দ শুনতে পেলেন। তার পরমুহুর্তেই কামান গর্জনের বিকট আওয়াজ শুনে প্রফুল্ল আচমকা লাইন পার হতে গেলে বিভূতিভূষণ হাত টেনে ধরলেন। আতঙ্ক আর আশঙ্কা কাজ করছে মনে। দুদিকে দুটো রেল ফটকের মাঝামাঝি স্থানে আছেন দুজনেই। বিভূতিভূষণ কান খাড়া করে শুনতে পেলেন ফটকে কর্মরত জনৈক রেলরক্ষীর কথা। এবার নিশ্চিত বিপদের আশঙ্কা করলেন বিভূতিভূষণ। অগত্যা খুবই সন্তর্পনে দ্বিতীয় গেটটি পেরোনোর জন্য মরীয়া হয়ে উঠলেন দুজনেই। ইতিমধ্যে লাটসাহেবের গাড়ি পার করানো হচ্ছে বলে অনুমান করে দুজনেই বসে পড়লেন ধান খেতের মধ্যে। মাইলের পর মাইল হেঁটে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। খিদে তেষ্টায় আর হাঁটা যায় না। দু’জনের পা ক্ষতবিক্ষত। ছড়ে গেছে গোটা শরীর।অসংখ্য কাঁটা মাড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলেছেন বিরামহীন পথ। প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে ভোর সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছলেন কংসাবতী নদীর তীরে।
