লোকসভা নির্বাচনের ছ’মাসের মাথায় মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খন্ডে বিধানসভা ভোট হল। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি তথা এনডিএ জোট। যে জোট তৈরি হয়েছিল বিজেপি, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা দল এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি দল মিলে। অন্যদিকে এই জোটের বিপক্ষে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাবিকাশ আঘাড়ী। এখন পর্যন্ত ভোটের ফলাফল অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। এই রাজ্যে বিধানসভা আসনের সংখ্যা ২৮৮টি। সরকার গড়তে প্রয়োজন ১৪৫ আসন। বিজেপি তথা এনডিএ জোট ইতিমধ্যেই ২২৮ আসন লাভ করেছে, অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ৫৪ আসন ও স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ৬ আসন।
আরেক রাজ্য ঝাড়খণ্ডে মূল লড়াই ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস-আরজেডি-সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর মহাগঠবন্ধন-এর। ঝাড়খণ্ডে ইতিমধ্যেই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে মহাগঠবন্ধন। রাজ্যটিতে ৮১ বিধানসভা আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ৪১টি আসন, যা দখল করেছে মহাগঠবন্ধন। অর্থাৎ রাজ্যটিতে আবার একবার সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। উল্লেখ্য, ১৭ দলের ইন্ডিয়া জোটের কয়েকটি দল মিলে তৈরি হয়েছিল মহাগঠবন্ধন জোট। সেই জোটের নিরিখে ইন্ডিয়া পেয়েছে ৫৭ আসন, এনডিএ পেয়েছে ২৩ এবং স্বতন্ত্র এক আসন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে দুই রাজ্যেই জিতবে ক্ষমতাসীন দল। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এক্সিট পোলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে ১৭৮-২০০টি আসন জিততে পারে বিজেপি, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপির মহায্যুতি। অন্যদিকে কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপির মহা বিকাশ আঘাড়ির ঝুলিতে ৮২-১০২টি আসন যেতে পারে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ভোটারদের মাঝে ভয় ছড়ানোর কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপির সেই কৌশল প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ। রাজ্যটিতে আবার ক্ষমতায় ফিরেছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতৃত্বাধীন জোট।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উপনির্বাচনের ছটি আসনের সবগুলোতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নৈহাটি, হাড়োয়া, তালডাংরা, মেদিনীপুর, মাদারিহাট ও সিতাই; ৬ আসনে সর্বত্রই তৃণমূল প্রার্থীদের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারতে হলো বিজেপিকে। এমনকি গত ৮ বছর ধরে দখলে রাখা মাদারিহাট আসনটিও হাতছাড়া হলো বিজেপির। এই উপনির্বাচনে বিজেপির একমাত্র শক্ত ঘাটি ছিল মাদারিহাট। কিন্তু সেখানেও হালে পানি পেল না বিজেপি। মাদারিহাটে ২৮ হাজার ১৬৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। এছাড়াও, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, হাড়োয়া সর্বত্রই তৃণমূলের জয়জয়কার। এবারের উপনির্বাচনে বাংলা থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হলো বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে। প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারে সরব গোটা পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যজুড়ে চলছে আন্দোলন প্রতিবাদ। এর মধ্যেই ছিল ৬ আসনে বিধানসভা উপনির্বাচন। এদিন ফল ঘোষণার পর দেখা গেল কোনো প্রভাবই পড়েনি আরজি কর কাণ্ডের। ছয় আসনের সবকটিতে জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এটাই ছিল ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে মমতার এসিড টেস্ট। এতে একপ্রকার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতল তৃণমূল।
গত ১৩ নভেম্বর ছিল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। একইসাথে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আসনসহ ভারতের ১৫টি রাজ্যের ৪৮টি বিধানসভা আসন এবং দুটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। উপনির্বাচনের পাশাপাশি সবার নজর ছিল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দিকে। একইভাবে কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড়ে লোকসভা আসনে ছিল লোকসভা উপনির্বাচন। সেখানে প্রথমবার ভোটে জিতে জয় পেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাজনীতিতে একাধিক জনসভায় ভাষণ দিলেও এবারই প্রথম তিনি ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন তিনি। সেখানেই উপনির্বাচনে সর্বশেষ তথ্য মতে প্রায় ৪ লাখের ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। চলতি বছরের গত এপ্রিল-মে মাসে, সাত ধাপে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কেরালার ওয়েনাড় আসন এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ওই দুটি আসন থেকেই প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি ভোটে জয় পেয়েছিলেন রাহুল। সেক্ষেত্রে রায়বেরেলি আসনটি নিজের দখলে রেখে ওয়েনাড় আসন থেকে পদত্যাগ করেন রাহুল। আসনটি শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। মুসলিম অধ্যুষিত ওয়েনাড় আসনে প্রিয়াঙ্কার প্রতিপক্ষ ছিলেন কেরলের বিজেপির নারী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক নভ্যা হরিদাস, সিনিয়র সিপিআই নেত্রী স্বাথ্যন মোকেরী।