বাংলায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এ ভর করে সাফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই পথ অনুসরণ করে এবার মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম মহিলাদের জন্য আর্থিক ভাতা প্রকল্প চালু করে বাজিমাত করল। মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরেও মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার ‘লাড়কি বহিন’ যোজনা চালু করে বিজেপি জোট বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরল। একই ভাবে ঝাড়খণ্ডে অগস্টে হেমন্ত সোরেনের সরকার ‘মাইয়া সম্মান’ যোজনা চালু করে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে পাঠাতে শুরু করে মহিলা ভোটব্যাঙ্কের আশীর্বাদ নিয়ে হেমন্তও ক্ষমতায় ফিরলেন।
উল্লেখ্য, কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার মহিলাদের ভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে মাসে দু’হাজার টাকার ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করেছে। তেলঙ্গানায় একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেস দু’হাজার টাকা মাসিক ভাতার ‘মহা লক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করেছিল। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্পে সাফল্য পেয়েছিল। সেই সাফল্য দেখেই মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার ‘লাড়কি বহিন’ যোজনা চালু করে। ভোটের আগেই পাঁচ মাসের পাওনা বাবদ সাড়ে সাত হাজার টাকা মহিলাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মহারাষ্ট্রের বাজেটে মোট এক লক্ষ কোটি টাকার খয়রাতির ঘোষণা করেছিল মহায্যুতি সরকার। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সরকার মহিলা ভাতা প্রকল্প চালু করায় রাজ্যের ঋণের বোঝা বেড়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি রিপোর্ট দিয়েছে, বাংলায় লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প ধারের টাকায় চলছে।
মহারাষ্ট্রে যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম, সেরকম পরিবারের ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলারা ‘লাডলি বহিন যোজনা’ থেকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। গত জুন মাসে লোকসভা ভোটে খারাপ ফলাফল করার পর জুলাই মাস থেকে এই যোজনা চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে। প্রকল্পটি যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীশ্রী’ বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণেই তা বলতে অসুবিধা নেই। মহারাষ্ট্রের মহায়ুতি সরকার ১৫০০ টাকার লাডলি বহিন প্রকল্প চালুর করার সময় থেকেই মহা বিকাশ আঘাদি প্রকল্পের সমালোচনা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মহা বিকাশ আঘাদি নিজেই তাদের নির্বাচনি ইস্তেহারে একই ভাবে দেড় হাজার টাকার বদলে তিন হাজার টাকা দেওয়ার একটি প্রকল্পের কথা বলে।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এই বার মহারাষ্ট্রে আড়াই শতাংশ মহিলা ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট মহিলা ভোটারের মধ্যে ৬৫.২১ শতাংশই ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে মোট পুরুষ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৬.৮৪ শতাংশ। একথা বলাই যায় মনে, একনাথ শিন্ডে সরকারের ‘লড়কি বহিন যোজনা’ প্রকল্প সে রাজ্যের মহিলাদের ভোটদানে অনেকটাই উৎসাহিত করেছে। যদিও মোট প্রার্থীর মধ্যে কেন মাত্র আট শতাংশ মহিলা প্রার্থী আর তার মধ্যে কেন ২১ জন জয়ী হয়েছেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে ভোটের ফলাফল দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ওই মারাঠাভুমের মা-বোনেরা উদার মনে ভোট দিয়েছেন। এবং একই সঙ্গে একথাও বলা যায় যে এনডিএ-র বিপুল জয়ে গেমচেঞ্জারের ভূমিকা নিয়েছে ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্প।
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের মতো ঝাড়খন্ডেও ভোটের ফলাফলে নির্নায়ক হয়েছেন মহিলারা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ বার ঝাড়খণ্ডে ভোট দিয়েছেন ৯১ লক্ষেরও বেশি মহিলা। সংখ্যাটি পুরুষ ভোটারদের থেকে অন্তত ছ’লক্ষ বেশি। পাশাপাশি এই রাজ্যেও বাংলার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’অথবা মহারাষ্ট্রের ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্পের আদলেই ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’ চালু করেছিলেন হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কংগ্রেস সরকার। এই প্রকল্পে সে রাজ্যের ২১ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই জায়গা থেকে অনেকেই মনে করছেন, মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র বিপুল জয়তে যেমন সহায়ক হয়েছে ‘লাডলি বহিন যোজনা’, তেমনই ঝাড়খণ্ডেও হেমন্তের জয়ে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’।
দেখা যাচ্ছে একদিকে যেমন হেমন্ত সোরেনরা দ্বিতীয়বার মহা গাঁটবন্ধনের ছায়ায় সরকার গড়তে চলেছে, তেমনই মহারাষ্ট্রে জয়ের ধ্বজা মেলে ধরেছে বিজেপি। এর মধ্যে যে দুটো বিষয় উল্লেখযোগ্য তা হল হেমন্তদের ‘মুখ্যমন্ত্রী মাইয়া সম্মান যোজনা’ আর শিন্ডের ‘লাডলি বেহনা যোজনা’। ঘটনা হল এই দুই রাজ্যেরই কেন্দ্রবিন্দুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ছায়া রয়েছে। সেই ছায়ারই মূর্ত রূপ ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’ আর ‘লাডলি বেহনা’।