বৃষ্টি প্রকৃতির আশীর্বাদ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ভারী হলে তা পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে। একেই বলে বৃষ্টি। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি সুপেয় পানির বড় উৎস। বিচিত্র জৈব ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ও কৃষি সেচব্যবস্থা সচল রাখতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। বৃষ্টি হয় বলেই প্রকৃতি সুজলা-সুফলা। বালুময় মরুভূমি থেকে সবুজ সমতল কিংবা পাহাড়ি এলাকা—পৃথিবীর সব অঞ্চলেই কম বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে কখনো বৃষ্টি হয় না। আশ্বর্যের বিষয় হচ্ছে, গ্রামটির অবস্থান মরুভূমির মধ্যে বা কাছাকাছি কোনো এলাকায় নয়। আরও অবাক করা বিষয় হলো এখানে রীতিমতো মানুষের বসতি রয়েছে। রয়েছে সুন্দর বাড়িঘর ও প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি। বছরে নানা দিক থেকে এখানে প্রচুর পর্যটকেরও আগমন ঘটে, অথচ এলাকাটি বৃষ্টিহীন।

গ্রামটির নাম আল হুতাইব। ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রশাসনিক এলাকা জাবল হারজের পার্বত্য অঞ্চলে এর অবস্থান। বেশ সমৃদ্ধ গ্রাম এটি। এখানে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ সবই রয়েছে। এমনকি ষোড়শ শতকের একটি স্থাপনাও আছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক আর দশটা গ্রামের মতোই। তাছাড়া নজরকাড়া বাড়িঘর ও প্রাচীন স্থাপনাও যেমন এখানে রয়েছে তেমনি ক্ষেত-খামারও রয়েছে, অর্থাৎ চাষবাসও হয় এখানে কিন্তু বৃষ্টি হয়না। তবে অন্য গ্রাম থেকে এর পার্থক্য হচ্ছে, অন্য গ্রামগুলো যখন বছরের কোনো না কোনো সময় বৃষ্টিতে ভিজে সিক্ত হয় সেখানে আল হুতাইব থাকে শুকনো খটখটে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যখন বছরের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিপাত হয়, ঠিক তখন আল হুতাইবে গ্রাম থাকে শুকনো। এই গ্রামে যেহেতু কখনো বৃষ্টি হয় না, তাই সেখানকার আবহাওয়া বেশ শুষ্ক।

কিন্তু কেন? কেন প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ। কারণ আর কিছুই নয়। সমতল থেকে গ্রামটির অবস্থান উঁচুতে। সমতল থেকে আল হুতাইব প্রায় ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই উচ্চতার কারণেই এখানে বৃষ্টিপাত হয় না। কারণ স্বাভাবিক বৃষ্টির মেঘ জমে সমতল থেকে ২০০০ মিটার উঁচুতে। ফলে মেঘ জমে যে বৃষ্টি হয় তা আল হুতাইবের নিচে ঝরে পড়ে। আর মেঘ না থাকলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এই গ্রামের পরিবেশ বেশ গরম। শীতকালে সকালের পরিবেশ খুব ঠান্ডা থাকলেও সূর্য উঠলেই প্রচণ্ড খরতাপে পুড়েন সেখানকার মানুষেরা।তবে এই বৃষ্টি না হওয়া নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই এখানকার বাসিন্দাদের। তারা এই প্রকৃতির সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিয়ে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরণের মেঘ রয়েছে। আর এই মেঘগুলোকে মূলত এদের আকার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। UCAR Center for Science Education- এর তথ্যমতে, যেসব মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে তাদের বলা হয় Low Clouds. অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২-৭ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থানকারী মেঘকে বলা হয় Middle Clouds. আবার, পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫-১৩ কিলোমিটার উচ্চতার মেঘকে বলা হয় High Clouds. অন্যদিকে, Cumulonimbus নামক এক ধরণের মেঘ রয়েছে যারা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৩ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যে কোনো স্থানেই অবস্থান করতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তথ্যমতে, Cumulonimbus নামের এই মেঘ বজ্রপাত এবং ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম।

তবে একথাও অনেকে বলেছেন, ইয়েমেনের আল হুতাইব নামে গ্রামটিতে কখনো বৃষ্টি হয় না এই কথাটি বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল হুতাইব নামক স্থানটি মোটেও বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক এলাকা নয় বরং এপ্রিল এবং আগস্ট মাসে সেখানে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এই বিষয়টি ভারতে ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে India Today এবং Factly. সেখানে বলা হচ্ছে যে ইয়েমনের আল হুতাইব নামক স্থানে কোনোদিন বৃষ্টিপাত হয়না এই তথ্যটি পুরোপুরি সত্য নয়।