কলকাতা ব্যুরো: তিনি সাগর দ্বীপ এলে কোথায় থাকবেন? সরকারি বাংলোর মধ্যে পিএইচই-র বাংলোটিকে সবচেয়ে ভালো ধরা হয়। এতদিন যে কোনো ভিআইপি এলে তাতেই উঠেছেন। কিন্তু সাগরে এলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের জন্য সমুদ্রের কাছেই তৈরি করা হয়েছিল একটি নতুন বাংলো। তাই বছর সাত-আটেক আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গঙ্গাসাগরে তৈরি হয়েছিল সেগুন কাঠের কটেজটি। প্রায় রাতারাতি সাগরে আনা হয়েছিল কোটি কোটি টাকার সেগুন কাঠ, তা দিয়ে বাংলো তৈরির দক্ষ কারিগর।
সাগর পাড়ে সে সময় দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার ঘেরা ছিল বেনুবনে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কপিলমুনির আশ্রম থেকে খানিক দূরে আর সমুদ্রের গা ঘেঁষে কাঠের কটেজ তৈরির জন্য কাটা পরলো সে সব গাছ। বিশাল জায়গা ঘিরে দ্রুত শেষ হলো সেই বাংলো তৈরির কাজ। সরকারি লোক-লস্কর রাখা হলো তার দেখভালের জন্য। যদিও তারপর আর সেখানে পা রাখেননি তিনি।
আবার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি সেই বাংলো ভাড়া দিয়ে খরচ তোলার কথাও ভাবেনি দপ্তর। ফলে জনগণের করের টাকায় সাধের বাংলো তৈরি হলেও তা পরে রয়েছে স্রেফ দূর থেকে দর্শনের জন্য। অনেকটা সেই কপিলমুনির মন্দির দর্শনে ফ্রি তে বাংলো দেখার মজা। স্থানীয়রা বলছেন, বহুবার বহু ট্যুরিস্ট এসে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। উপযুক্ত ভাড়া দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তা ভাড়া দেওয়ার কোনও সুযোগ না থাকায় তাঁরা ফিরে গিয়েছেন। এখন সাগরদ্বীপ ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটকের কাছে ওটা ভূত বাংলো। যদিও এর কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি কর্মীদের।
দীর্ঘদিন ওই বাংলো নিয়ে আর মাথাব্যাথা নেই সরকারিস্তরে। কারণ তাঁরাও বুঝেছেন, যাঁর আবদারে এই বাংলো তিনি নিজেই হয়তো ভুলে গিয়েছেন। ফলে আর রক্ষণাবেক্ষণ নেই সেগুন কাঠে তৈরি এই কটেজের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন নষ্ট হতে বসেছে কটেজটি। ক্ষমতায় এসে গঙ্গাসাগরে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতে তাঁর জন্য সেগুন কাঠের কটেজ তৈরি হয়েছিল গঙ্গা সাগরে। মুখ্যমন্ত্রীর মনের মতো করে কটেজ তৈরি করতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল সরকারের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগরে আসেননি। পর্যটকদের জন্যও খুলে দেওয়া হয়নি কটেজটি। সর্বসাধারণের ওই কটেজে প্রবেশ নিষেধ।
প্রতি বছর ভিড় উপছে পরে গঙ্গাসাগর মেলায়। পূণ্যার্থীদের সঙ্গে থাকেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও। কিন্তু কারো জন্য পয়সা দিলেও খোলে না তার দরজা। আর এবার সাগরে প্রবল জলোচ্ছাস ও ভাঙ্গন শুরুর পর থেকে দ্রুত ভাঙছে পাড়। এখন ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র মাত্র শ’দের-দুশো মিটার দূরে। ফলে আর কিছুদিন পরেই হয়তো সরকারি খাতায় শুধু হিসেবেই থেকে যাবে সেগুন কাঠের কটেজের কথা।