কলকাতা ব্যুরো: উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দরিদ্র মানুষদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কলকাতা এনে কিডনি বেচার চক্র কয়েক বছর আগে রমরমিয়ে উঠেছিল। সেই নিয়ে কিছু ধরপাকড় ও সংবাদমাধ্যমে লেখালেখির পর হটাৎই বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। কিন্তু এবার ফের সেই কিডনি চক্র মাথাচাড়া দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত অসমের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ১৪০ জন গরিব মানুষকে এনে কলকাতার ইএম বাইপাস লাগোয়া হাসপাতালে কিডনি বিক্রি করার অভিযোগ সামনে এসেছে। যা নিয়ে আসামে ধরপাকড় শুরু হতেই সিবিআই তদন্ত দাবি উঠেছে। কারণ আপাতত অসমের নাম যুক্ত হলেও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে থেকে গরিব মানুষদের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে, একই কাজ করানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ অফিসাররা।
একইসঙ্গে অসমের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার ডেপুটি লিডার গৌরব গগৈ চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গোটা ঘটনায় কলকাতার হাসপাতালে নাম জড়িয়ে যাওয়ায়, এ নিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছেন গৌরব।
কলকাতার বাইপাস লাগোয়া কয়েকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগেও কিডনি চক্র চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। বেশকিছু ধরপাকার হলেও, প্রভাবশালীদের চাপে সেই তদন্ত ঠাণ্ডা ঘরে চলে যায় বলে অভিযোগ। অথচ সেই ঘটনায় বেশকিছু প্রভাবশালী আর আরকাঠির নাম উঠে এসেছিল। সেই এজেন্টরাই বিভিন্ন জেলার গরিব মানুষদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে, ওই হাসপাতালগুলিতে নিয়ে গিয়ে কিডনি কেটে তাদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে এলাকাছাড়া করত বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পিছনে সমাজের একটা বড় প্রভাবশালী অংশ যুক্ত থাকার অভিযোগের বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ সেসময় তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পড়ে সে সব বন্ধ হয়ে যায়।
এবার অসমের নওগাঁ জেলায় এই চক্রের তৎপরতা প্রথম সামনে আসে। নওগাঁ সদর থানায় গত সপ্তাহে অভিযোগ দায়েরের পর দুজন দালালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ডিব্রুগড় ও মরিগাঁও জেলা থেকেও গরিব মানুষদের নিয়ে কলকাতায় এসে তিন- চার লাখ টাকার বিনিময় কিডনি বিক্রির টোপ দেওয়া হয়। সেখানকার চা-বাগান গুলির গরিবদের কেউ কেউ নিজেদের কিডনি টাকার বিনিময়ে বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন। যদিও এই চক্রের দালালদের আরো বেশি টাকা দেওয়া হয় কিডনিদাতাদের ধরে আনার জন্য। আর বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের থেকে অর্থবানরা কিডনির প্রয়োজনে কলকাতার এইসব হাসপাতালগুলি সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের থেকে এই কিডনির বিনিময় আরো মোটা টাকা নেয় হাসপাতালগুলি।
ফলে একটা বিরাট ব্যকেট কাজ করছে বলে অভিযোগ। কিন্তু এবারও সেই চক্রর বিরুদ্ধে যদিবা তদন্ত শুরু হয়ও মাঝপথে অজ্ঞাত কারণে চাপা পড়ে যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ কয়েকবছর আগের অভিজ্ঞতা থেকে এক বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, সত্যিই যদি এই চক্রর পর্দা ফাঁস হয়, তাহলে সমাজের বিভিন্ন পেশার বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম সরাসরি জড়িয়ে যেতে পারে গোটা চক্রে।