সোমবার তারা তাকিয়ে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানির দিকে। তার আগে শনিবারের জিবি বৈঠকের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে পূর্ণ কর্মবিরতি করবেন তাঁরা। অবশেষে সেই পথেই হাঁটলেন তাঁরা। রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররা ফের রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে পূর্ণ কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে মোট দশ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। সেই দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এই আবহে পুজোর আগে সরকারের ওপর ফের নতুন করে চাপ সৃষ্টি হল।
উল্লেখ্য, সোমবার মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্ত জরুরি পরিষেবার দায়িত্ব পালন করবেন। আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি), ইনপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (আইপিডি), এমনকি অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতেও তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যের পর জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শীঘ্রই পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানাবেন। এর পরেই দীর্ঘ আট ঘণ্টার জিবি বৈঠক হয়। তারপরেই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত।
এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের নিগ্রহের ঘটনা ঘটে পানিহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে। গত শুক্রবার রাতে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজে রোগীর পরিজনদের হাতে প্রহৃত হন জুনিয়র চিকিৎসক-সহ কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মী। অভিযোগ, শুধু মারধর করা নয়, ‘আরজি কর করে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কর্তব্যরত এক জুনিয়র মহিলা ডাক্তারকে। তার জেরে ইতিমধ্যেই সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। এরপর সোমবার ফের সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার কথা জানায়। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতেই রাজ্য জুড়ে নতুন করে পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিলেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের তরফে অনেকবারই নিরাপত্তার আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু সরকার তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি সোমবার সুপ্রিম কোর্টেও এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। এই আবহে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
জুনিয়ার ডাক্তারদের তরফ থেকে যে দশ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে সেগুলি হল— নির্যাতিতার দ্রুত ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ, হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করা, হাসপাতালের খালি বেডের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদ পূরণ করা, হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা, দ্রুত সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন করে সিসিটিভি, প্যানিক বোতামের ব্যবস্থা করা। উল্লেখ্য, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব উঠে আসে। পাশাপাশি, তদন্তের আওতায় আসা হাসপাতালের সাত জনকে আপাতত সাসপেন্ড করারও দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। কারা তদন্তের অধীনে রয়েছেন সেই নামের তালিকা আদালতে জমা দেওয়ার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। তখন রাজ্যের আইনজীবী জানান, পাঁচ জনকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কোন পাঁচ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, সেই নামের তালিকাও জানতে চান প্রধান বিচারপতি। রাজ্যের তরফেও আদালতে আশ্বস্ত করা হয়, তদন্তকারী সংস্থা নামের তালিকা দিলে পদক্ষেপ করা হবে। রাজ্যের আইনজীবী জানান, কেউ যত প্রভাবশালীই হোন, সিবিআই তাঁদের নামের তালিকা দিলে পদক্ষেপ করা হবে।
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ কত দূর এগোল, সেই প্রশ্নও করেছেন। এ নিয়ে রাজ্যের জবাব পাওয়ার পরে সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত কাজ শেষ করার সময়সীমাও বেঁধে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়ে দেয়, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে হাসপাতালগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানো-সহ সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে। অন্যদিকে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়াও কি আর কেউ জড়িত? জড়িত থাকলে কবে গ্রেফতার করা হবে? কেন খুন করা হয়েছিল ওই চিকিৎসককে? সিবিআইয়ের থেকে এখন এই প্রশ্নেরই উত্তর পেতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই তাঁরা তাকিয়ে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির দিকে। অপেক্ষায় ছিলেন, শুনানিতে সিবিআই কী জবাব দেয় তা জানার জন্য। একই ভাবে, রাজ্যের বক্তব্য শুনতেও মুখিয়ে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। মোটকথা সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা, ভয়শূন্য পরিবেশ, নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, তার সুনির্দিষ্ট উত্তর জানতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এর মধ্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর মিললেও বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরই মেলেনি সোমবারের শুনানিতে।