আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর ৪৯ দিন পেরিয়েছে। তারপর থেকে পথে নেমে যে বিক্ষোভ প্রতিবাদ তাতে বিরতি নেই। এখনও সুবিচারের আশায় জ্বলছে মশাল, মিছিলে হাঁটছেন মানুষ। পথে-ঘাটে, অলি-গলিতে রোজ যে স্লোগান উঠছে তাটে বোঝাই যাচ্ছে এই আশ্বিনে বাংলায় এবার উৎসবের আলো তেমন করে জবলবে না। চারিদিকে পুজোর আয়োজন চললেও প্রতিবারের সেই মেজাজ নেই বরং স্তিমিত। এই আবহে সোমবার ফের সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চে সোমবার ফের ফের শুনানি হতে চলেছে। ২৭ শে সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি পিছিয়ে যায়। তবে এদিন সকালে নয়, আর জি কর মামলার শুনানি হবে মধ্যাহ্নভোজের পর। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ ফের ওই ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখবে। শুনানিতে ৪২টি পক্ষের ২০০-র বেশি আইনজীবী অংশ নেবেন।
এর আগে একটানা কর্মবিরতি তুলে জুনিয়ার ডাক্তারেরা আংশিক ভাবে হলেও জরুরি পরিসেবা দিতে শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি দক্ষিনবঙ্গের যে জেলাগুলিতে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সেই সব জায়গায় তাঁরা ত্রাণ নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেছেন, অভয়া ক্লিনিক খুলেছেন কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর মধ্যে সাগর দত্ত হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পানিহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, রোগীর পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালের চারতলায় উঠে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা চালান। ভাঙচুর করা হয় মহিলাদের ওয়ার্ডে। এমনকি, মহিলা চিকিৎসকদের ঘর থেকে টেনে বার করে মারধর করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের বেগ পেতে হয়। এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তার, নার্স-সহ সাত জন আহত হয়েছেন। সেই ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন হাসপাতালের নার্সরাও।
খবর পেয়ে সেই রাতেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে যান পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট (ডব্লিউবিজেডিএফ)-এর প্রতিনিধিরা। সাগর দত্ত মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শনিবার প্রায় সারা দিনই সাগর দত্তের পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন তারা। দুপুরে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে যান রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। হাসপাতালে দুপুরের দিকে গিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেন তিনি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন। তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের ১০ দফা দাবি মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি তোলা হবে না বলে স্পষ্ট জানান তাঁরা।
শনিবার সন্ধ্যার পরেই জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্যেরা জিবি বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই ফের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায় উঠে আসে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির বিষয়টি। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আশ্বাস পাওয়ার পরেই তাঁরা আংশিক কর্মবিরতি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই মতো কোনও কাজ হয়নি এখনও। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা। নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতি এখনই উঠছে না বলে স্পষ্ট করলেন তাঁরা। পাশাপাশি, রবিবারের কর্মসূচির ঘোষণাও করলেন তাঁরা। রবিবার সন্ধ্যায় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডানলপ মোড় পর্যন্ত মোমবাতি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য কী জানাচ্ছে, সেটার উপর নির্ভর করছে রাজ্যের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা ফের কর্মবিরতিতে যাবেন কিনা। ডাক্তাররা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, সুপ্রিম শুনানিতে রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া পূরণে সদিচ্ছা না দেখালে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে যেতে পারেন তাঁরা। সেই সিদ্ধান্তও নির্ভর করছে শুনানির উপর।