ফের কলকাতার রাস্তায় নামলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল এবং মিছিল শেষে হল সভা। কেবল জুনিয়র ডাক্তাররাই নন সঙ্গে পা মেলান সিনিয়র ডাক্তারেরা এবং অন্যদিনের মতো মিছিলে শামিল হয়েছিলেন নাগরিক সমাজও। জুনিয়র ডাক্তাররা গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আংশিকভাবে কাজে ফিরেছিলেন কিন্তু দিন দশেক চলার পর ফের পূর্ণ কর্মবিরতির পথে নামেন তাঁরা। কেন ফের পূর্ণ কর্মবিরতি? ধর্মতলার সভা থেকে সেই ব্যাখ্যাও দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, তাঁরা রাজ্য সরকারের সদিচ্ছাটুকু দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখনও রাজ্য সরকারের তরফে সেই সদিচ্ছার মুখ দেখা যায়নি। বরং তারা খেলিয়ে চলেছে। তারা বোঝাতে চেষ্টা করছে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা এক পক্ষ আর রোগীরা অন্য পক্ষ। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা আমরা বলছেন, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-রোগী-পরিজন সবাই এক পক্ষে। উল্টো পক্ষে যদি কেউ থাকে, সে হল রাজ্য সরকার।
নিজেদের কর্মবিরতির কারণে যে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, সেকথাও জুনিয়ার ডাক্তারদের বক্তব্য থেকে উঠে আসে। তাঁরা জানালেন, রোগী মৃত্যুর দায় কি শুধুই সরকারের? জুনিয়র ডাক্তারদের নয়? এই ধরনের প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তাঁদের শুনতে হচ্ছে। এদিন ধর্মতলার সভায় এসব প্রশ্ন নিজেরাই উত্থাপন করে উত্তরে জানালেন, তাঁরা কাজেই ফিরতে চান। কিন্তু তাঁরা স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অপসারণ চান, কেবল তাই নয় তাঁদের অন্যান্য দাবিগুলিকেও সরকারকে মানতে হবে। কিন্তু সরকার মানুষকে বোঝাতে চাইছে জুনিয়র ডাক্তারেরা নাকি ‘গণশত্রু’। মানুষের কথা না ভেবেই কর্মবিরতি চালানো হচ্ছে, এমন একটি ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে জুবনিয়ার ডাক্তারদের বক্তব্য, কোনও রোগীর মৃত্যু তাঁর পরিবারকে যতটা দুঃখ দেয়, এক জন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীকেও ততটাই দুঃখ দেয়। তাঁরা বলেন, জুনিয়ার ডাক্তাররা গণশত্রু নন, তাঁরা কর্মবিরতি তুলতে চান এবং এখনই তুলতে চান। কিন্তু তাঁদের দাবিগুলি যদি না মানা হয় তাহলে কোন ভরসায় তাঁরা কর্মবিরতি তুলবেন? সরকারি হাসপাতালগুলিতে যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি সেখানে তাঁরা কী ভাবে সুরক্ষিত বোধ করবেন বা নিশ্চিন্ত হয়ে কাজ করবেন?
ধর্মতলার সভা থেকে তাঁরা এদিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, আন্দোলনের অভিমুখ একমাত্র রাজ্য সরকার নয়, সমান ভাবে সিবিআইও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুললেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাই কোর্ট, সর্বত্রই সিবিআইয়ের আইনজীবীদের ভূমিকায় যে তাঁরা ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ দেখছেন সেকথাও স্পষ্ট করে বললেন, প্রশ্ন তুললেন, অতীতে সিবিআই যে মামলাগুলির তদন্তভার নিয়েছে সেগুলির মধ্যে কতগুলির শেষ পর্যন্ত মীমাংসা হয়েছে? জুনিয়র ডাক্তারেরা এদিনের মঞ্চ থেকে এই আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন যে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখতে না পারলে ‘সেটিং’ হয়ে যেতে পারে। যা তাঁরা কিছুতেই হতে দেবেন না, প্রয়োজন হলে তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের পথে এগোবেন। দ্বিতীয় বার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে বুধবার বার বার ব্যাখ্যা দিতে দেখা গেল জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁরা যে রোগীদের কথাও মাথায় রাখছেন, সেটিও বুঝিয়ে দেন। তাঁদের যুক্তি, যদি কর্মবিরতির পথ থেকে সরতেই হয়, তবে সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কারও ‘নৈতিক জ্ঞান’ শুনে নয়।
বিচারের ব্যবস্থা না করে অপরাধীদের আড়াল করছে রাজ্য। প্রতিবাদীদের উলটে হেনস্তা করছে। বিচারের দাবিতে আন্দোলন সে কারণেই অত্যন্ত সঙ্গত। বুধবার জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে এ কথা জানান জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরসের চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল প্রতিবাদীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সমানে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জুনিয়র ডাক্তার এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামা সব অংশকে। দেখা গিয়েছে আইসিইউ-তে বেড ছিল না বলে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টে, ৩০ সেপ্টেম্বর, রাজ্য সরকার এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের দায়ী করেছে। হাসপাতালেই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না থাকার দায়েও আন্দোলনকে দায়ী করার প্রচার হয়েছে। সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘বেড দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তার জন্য বাজেট লাগে, স্বাস্থ্য দপ্তরের নীতির ওপর নির্ভর করে। যা বরাদ্দ হয় তার সবটা খরচ হয় না রোগীর জন্য। দুর্নীতিতে টাকা লোপাট হয়ে যায়। অন্যায়ভাবে ডাক্তারদের দায়ী করা হচ্ছে। যে সরকার চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে পারে না তাদের কাজে ফিরতে বলার অধিকার সে সরকারের নেই”।