কলকাতা ব্যুরো: শরীকি বাড়ির এক কামরার ছোট্ট ঘরে তখন গোয়েন্দারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন ৮৭ লক্ষ টাকা। আলমারি ঘেঁটে তাদের চক্ষু চড়কগাছ! দু হাজার আর পাঁচ শ টাকার নোট থরে থরে সাজানো। এর পরেই এক তদন্তকারীর চোখ গেল চায়ের পেটিতে। সেখানে হাত গলাতেই আবারও বেরিয়ে এলো চকচকে টাকা। সব মিলিয়ে অংক ছ কোটি ৯৭ লাখ।
কিন্তু যে অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা হালা দিয়েছিলেন বেহালার গৌতম সাতওয়ানির বাড়িতে, তার থেকে অনেক অনেক বেশি টাকা। অবশেষে টানা জেরায় প্রাথমিকভাবে লালবাজারের গোয়েন্দারা যা জেনেছেন, তাতে আড়ালে গৌতমের মগজের প্রশংসা না করে পারছেন না। কেননা এমন বুদ্ধি সে যদি ভাল কাজে লাগাত, হয়তো তাতে উপকার হত সমাজের।
কে এই গৌতম সাতওয়ানি ?
গোয়েন্দারা বলছেন, একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে ওই যুবক ‘ ওয়ান ম্যান আর্মি।’ নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে অনলাইন প্রচারণার ক্ষেত্রে কথায় কথায় উঠে আসে জামতারা গ্যাং এর নাম। ঝাড়খণ্ডের দুটি থানা এলাকায় বেশকিছু গ্রাম থেকে চলে এই প্রতারণা চক্র। কিন্তু গৌতমের সে সবের বালাই নেই। তিনি একাই এব্যাপারে একশো। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লোকের একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার জুরি এই মুহূর্তে কলকাতায় আর তেমন চোখে পড়েনি লালবাজারের কর্তাদের।
তবে সে ফেঁসে গিয়েছে অন্যের একাউন্ট ভাড়া করতে গিয়েই। জালিয়াতি করে হাতানো টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে রাখতে গিয়েই এবার ফেঁসে গেল এই কলকাতার প্রতারক। ইতিমধ্যে অন্তত ১০০ জনকে এভাবেই ঠকিয়ে, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা হা তিয়ে নিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে লালবাজার। কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতসাফাই করে দিলেও, নিজে কিন্তু থাকতো খুব সাধারন ভাবে। একেবারে সাদামাটা জীবন যাপন করত ঠাকুমার সঙ্গে থাকত ওই যুবক।
নেশা ছিল তার কম্পিউটার। কিছুদিন একটি কল সেন্টারে কাজ করেছিল। পরে নিজেই রাসবিহারী এলাকায় কল সেন্টার খোলে। আর সেই কল সেন্টার থেকেই শুরু হয় জালিয়াতির ব্যবসা। গত বছর দেড়েক ধরেই প্রতারক এই নতুন ফাঁদ পেতেছিল বলে জেরায় জানতে পেরেছে পুলিশ। আর মূলত তার টার্গেট ছিল বিদেশীরা।
এরইমধ্যে আবার এই যুবকের বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিয়ের পরেই নতুন বউ আর কোটি কোটি টাকা নিয়ে এ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দেওয়ার ছক করেছিল বেহালার এই হ্যাকার।
পুলিশ আঁচ পেল কিভাবে
গত আগস্ট মাসে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক শেক্সপিয়ার সরণি থানায় একাউন্ট হ্যাক এর অভিযোগ দায়ের করে। তাতে বলা হয়, ইংল্যান্ডের বাসিন্দা তাদের এক গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৭ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই ব্যক্তির কাছে তার আগে কোন এক জায়গা থেকে ফোন করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, তার একাউন্টের সিস্টেম ক্র্যাশ করে গিয়েছে। তা ঠিক করে দেওয়ার নাম করে গ্রাহকের ডিভাইসের পুরো কন্ট্রোল নিয়ে নেয় এই প্রতারক। আর তারপরেই চোখের নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব ৮৭ লক্ষ টাকা। তারপর বিভিন্ন ভাড়া করা একাউন্টে সেই সব টাকা ট্রান্সফার করে ফেলা হয়
বিভিন্ন জাল নথি দিয়ে সেজন্য প্র তারক প্রচুর অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছিলো বিভিন্ন ব্যাংকে। আবার কিছু লোকের একাউন্ট ভাড়াও নিত। এমনই এক একাউন্ট ভাড়া দেওয়া লোক সহ আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Previous Articleসিনেমা নয়, হল খুললো সাফাইয়ের জন্য
Next Article রাজ্যে করোনায় মৃত্যু পাঁচ হাজার ছাড়ালো
Related Posts
Add A Comment