অন্তত ২২ লাখ মানুষ যুক্ত বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে। তার পরেও রয়েছে তাদের পরিবার। সামনে আসছে ঈদ। কিন্তুু এখন বেশিরভাগ এই মানুষগুলির দিন কাটছে চরম দুর্দশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে। জুলাই মাসের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এক হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের গত জুনে এর মজুরিই মেলেনি। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রাপ্য বোনাস নিয়েও।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তৈরি পোশাকের শিল্প প্রায় সাড়ে ২২ লাখ নারী শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন এনেছে। নারীদের স্বনির্ভর হতে সাহায্যও করেছে। অধিকাংশ শ্রমজীবী নারী এখন বিয়ে এবং সন্তানধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারেন। কিন্তু মালিকদের এ হেন আচরণে বিস্মিত এই সব শ্রমিকরা।
শ্রমিকনেতাদের অভিযোগ, সময়মত মজুরি না পেয়ে হাজার খানেক কারখানার শ্রমিক তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করাও অনেকের পক্ষে কঠিন হযে পড়ছে। শিল্প পুলিশ এর তথ্য জানাচ্ছে গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সাভার- আশুলিয়া, খুলনা, মৈমনসিংহ, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও খুলনায় ৭ হাজার ৬০২ টি শিল্প কারখানা রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে ২ হাজার ২৯০ টি জুন এর মজুরি দেয়নি। এগুলির অর্ধেকের বেশী বস্ত্র কারখানা।
শিল্প পুলিশ এর তথ্য জানাচ্ছে গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সাভার- আশুলিয়া, খুলনা, মৈমনসিংহ, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও খুলনায় ৭ হাজার ৬০২ টি শিল্প কারখানা রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে ২ হাজার ২৯০ টি জুন এর মজুরি দেয়নি। এগুলির অর্ধেকের বেশী বস্ত্র কারখানা।
শিল্প পুলিশ সূত্রে আরো জানানো হয়েছে, গাজীপুর, নারাযণগঞ্জ, মৈমনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম, সাভার – আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমএ-র সদস্য ১ হাজার ১০১ কারখানার মধ্যে ৫৭১ টি মজুরি দেয় নি। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই -র সদস্য ১ হাজার ৮৮২ কারখানার মধ্যে ৪৭২ টি তে আজ পর্যন্ত মজুরি বাকি। এদিকে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ-র সদস্য ৩৮৯ কারখানার মধ্যে ১৩২ টি মজুরি দেয়নি। এই তিন সংগঠন এর ৩ হাজার ৩৭২ টি কারখানার মধ্যে আজ পর্যন্ত মজুরি দেয়নি ১ হাজার ১৭৫ টি। অবশ্য শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নন কারখানার মালিকপক্ষের সংগঠনগুলি। তাদের মতে বেশিরভাগ কারখানার মজুরি দেওয়া প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে করোনার সংক্রমণের কথা মাথাই রেখে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয় বাংলাদেশে। মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সরকার শ্রমিকদের মজুরি দেবার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। সেই প্যাকেজ থেকেই ১ হাজার ৮০০ কারখানা মালিক ২ শতাংশ সেবা মাশুল ঋণ নিয়ে তিন মাসের মজুরি দিচ্ছেন।
পোশাকের বাজার গত দুই মাস খু্বই দুর্দশাগ্রস্ত গিয়েছে। বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা। এপ্রিলে কারখানা বন্ধের সময় অবশ্য ৬৫ শতাংশ মজুরি দিয়েছেন। কথা হচ্ছিল সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতারের সঙ্গে। তিনি জানালেন,” করোনার সময় মজুরি না-পাওয়াটা শ্রমিকদের কাছে অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার ব্যাপার। যেখানে মানুষ তার সব শ্রমটুকু দিয়ে দিচ্ছে সেখান থেকেই তার বিপদের সময় সে সাহায্যের আশা করে। এ যেন এক্কেবারে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।” তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মালিকরা অমানবিকতার সব পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। সরকার কঠোর পদক্ষেপ না নিলে শ্রমিকদের দুর্দশার সীমা থাকবে না।
প্রতি বছরই সরকার শ্রমিক ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক করে বেতন ভাতা পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দেয়। এদিকে জানা যাচ্ছে,শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্ত মালিকপক্ষকে জুলাই মাসের ২৫ তারিখ শ্রমিকদের সমস্ত পাওনা গন্ডা মিটিয়ে দিতে বলেছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ও মালিকপক্ষকে ওই একই দিনে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের কথা বলেন। সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদটির সভায় ২৭ জুলাইযের মধ্যে বোনাস ও ৩০ জুলাই এর মধ্যে চলতি মাসের অর্ধেক মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ।