অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো মনে হয়। কিন্তু তা নয়, বাস্তবিকই মাঝ পথ থেকে তাকে যেতে হল সিজিও কমপ্লেক্সে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই তুলে নিয়ে যায় তাদের ডেরায়। তবে সন্দীপ গ্রেফতার হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু এখনো জানা যায়নি। যিনি সকালে ইস্তফা দিয়ে বিকালে নতুন ‘পোস্টিং’ পেতেন সেই তিনি ১২ ঘণ্টা কেটে গেলেও সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোননি। সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাকে সারা রাত জেরা করেছে। সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেওয়ার জন্য সন্দীপকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে তলব করেছিল। কিন্তু হাজিরা দেননি সন্দীপ। বরং গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যভবনে। সেখানে ঘণ্টাখানেকের মতো ছিলেন। সেখান থেকে বেরোনোর পরই মাঝরাস্তা থেকে সিবিআই তাঁকে তুলে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে চলে যায়।
সূত্রের খবর, নিরাপত্তার অভাব- এই কারণ দেখিয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে আসেননি। কিন্তু সিবিআই তাঁকে পুরোপুরি নিরাপত্তা দিয়ে মাঝরাস্তা থেকেই তুলে নেয় এবং তাদের ডেরায় নিয়ে আসে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই সন্দীপের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় অনেক কিছু জানেন সন্দীপ। তাঁর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে প্রবল চাপ তৈরি হলেও বহাল তবিয়তে ছিলেন সন্দীপ। পরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিকেলেই নতুন পদ পেয়ে যান। কিন্তু নতুন চেয়ারে বসার আগেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করেন পড়ুয়ারা। অধ্যক্ষের ঘরের তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টে তুমুল ভর্ৎসিত হন সন্দীপ। সময় বেঁধে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কড়া ভাষায় বলেন যে সন্দীপ যদি লম্বা ছুটিতে না যান, তাহলে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে। তারপর অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে চলে যান সন্দীপ।
সূত্রের খবর, আরজি কর-কাণ্ডে ম্যারাথন জেরা চলছে সন্দীপ ঘোষের। তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার পর থেকেই সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার সময় তিনিই ছিলেন আরজি করের অধ্যক্ষ। হাইকোর্টেও সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। তাঁকে ‘প্রভাবশালী’ ও ‘পাওয়ারফুল লোক’ বলে উল্লেখ করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আদালত প্রশ্ন তোলে, হাসপাতালের ভিতরে একজন মহিলা চিকিৎসকের দেহ পড়ে থাকা সত্ত্বেও, কেন অভিযোগ জানালেন না প্রিন্সিপাল? সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই তলব করলেও হাজিরা দেননি তিনি। এরপরই শুক্রবার কার্যত মাঝরাস্তা থেকে তাঁকে সিবিআই। দুপুর ৩ টের পর সন্দীপের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। গোটা রাতে কোথায় ছিলেন সন্দীপ ঘোষ? বাকিদের বয়ানের সঙ্গে তাঁর বয়ান মিলছে কি না, ঘটনার দিন রাতে কারা সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। ইতিমধ্য়েই আরজি কর থেকে একটি রেজিস্টার নিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেটাই খতিয়ে দেখে একে একে হাসপাতালের কর্মীদের তলব করছে সিবিআই। নার্সিং স্টাফ থেকে নিরাপত্তা রক্ষী, সবাই আছেন সেই তালিকায়। মোট ১৩ জনকে ধাপে ধাপে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সূত্রের খবর। ঘটনায় যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর গতিবিধি জানতে ফুটেজ সংগ্রহ করেছে সিবিআই।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর থেকেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা বারবার প্রশ্ন তুলেছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে। এমনকী এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে গিয়েও কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিল, এখনও কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না তাঁকে। এমনকি আদালতের উষ্মার মুখে পড়তে হয় সন্দীপের আইনজীবীকে। সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে না-পারার কারণ হিসেবে হাইকোর্টে সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলছিল। তাই সমন পেয়েও হাজিরা দিতে পারেননি। শুনে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কটাক্ষের সুরে তার পর্যবেক্ষণে বলে, ‘সিবিআই অফিসে যাওয়ার জন্য আপনাকে রাজ্য নিরাপত্তা দেবে। আপনি যদি তারপরেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে সিবিআইকে আপনার বাড়িতে ডাকুন। তারাও এসে আপনার বাড়ি দেখে যাক।আদালত একথাও বলে, ‘রাজ্যকে বলুন নিরাপত্তা দিতে। আপনি তো প্রভাবশালী! ৫০০ পুলিশ দিয়ে দেবে। না হলে আদালতের কাছে আসুন। কেন্দ্রীয় বাহিনীই না হয় আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য আদালত সন্দীপ ঘোষকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে।