পদক ছাড়া দেশে ফিরলেও গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানায় অনুরাগীরা। দিল্লি এয়ারপোর্টে নামার পরই ভিনেশকে ঘিরে উপচে পড়ে ভিড়। তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে এগিয়ে আসে একাধিক মানুষ। সেই সময় তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে কুস্তির ফাইনালে উঠে ইতিহাস লিখেছিলেন প্রাক্তন কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট। কিন্তু স্বপ্নের আর এক ধাপ এগোনোর আগেই সবকিছু ভেঙে চুড়মার হয়ে যায়। ফাইনালের সকালে যখন ভিনেশের ওজন মাপা হয়, তখন দেখা যায় তাঁর ১০০ গ্রাম বেশি ওজন রয়েছে ভিনেশের। সেই কারণে তারকা কুস্তিগীরকে ফাইনালে বাতিল ঘোষণা করা হয়! এই খবর মেনে নিতে পারেননি কেউই।এমনকী এরপর বিচার চেয়ে ভিনেশ কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট ওরফে সিএএসের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভিনেশের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। যদিও সিএসএ-র রায়ের বিস্তারিত এই মাসের শেষের দিকে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের এই তারকা কুস্তিগীর বললেন, ‘সমর্থকদের থেকে তিনি যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তারজন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন। আমাকে ওরা সোনার পদক দেয়নি তো কী হয়েছে। ভারতে ফিরে আমি যে সম্মান এবং ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা ১,০০০ সোনার পদকের সমান। প্রসঙ্গত, ভিনেশ ফোগাটকে অভ্যর্থনা জানাতে বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক এবং কংগ্রেস সাংসদ দীপেন্দ্র সিং হুডাও উপস্থিত ছিলেন। এমনকী, তাঁর জন্য রোড-শো আয়োজন করা হয়েছিল।২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট মহিলাদের ৫০ কেজি বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রথম ম্যাচেই তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে পরাস্ত করেছিলেন। এরপর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমি ফাইনাল ম্যাচে ধামাকাদার জয়লাভ করে ফাইনাল ম্যাচের টিকিট কনফার্ম করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ফাইনাল ম্যাচের দিন সকালবেলা তাঁর শারীরিক ওজন ১০০ গ্রাম বেশি হয়। সেকারণে তাঁকে এই ইভেন্টে ‘অযোগ্য’ বলে ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি বিশেষ আদালতে আবেদনও করেছিলেন। প্রথিতযশা আইনজীবী হরিশ সালভে তাঁর হয়ে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু, বিশেষ আদালত শেষপর্যন্ত ভিনেশের আবেদন খারিজ করে দেয়।
নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি আবেগতাড়িত পোস্ট করেন ভীনেশ। সেখানে তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন থেকে শুরু করে পিতৃবিয়োগ সবই তুলে ধরেন। কতটা লড়াই করে এই জায়গায় তিনি এসেছেন তা নিয়ে লেখেন ভীনেশ। অলিম্পিকে পদক না পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। নিজের ছোটবেলার কথায় ভীনেশ লেখেন, ‘ছোটবেলা জানতাম না অলিম্পিক্স রিংয়ের অর্থ কী। বাচ্চা বয়সে আমি শুধু ভাবতাম, লম্বা চুল রাখব। হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে থাকব। যেরকম আর পাঁচটা মেয়ে সেই বয়সে ভেবে থাকে আর কী। আমার বাবা সাধারণ বাস ড্রাইভার ছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন, আমি বিমান চালাব আর এমন একদিন আসবে যখন বাবা রাস্তায় বাস চালাবেন আর আমি তাঁরই মাথার ওপর দিয়ে বিমান নিয়ে উড়ে যাব। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের ক্যান্সার স্টেজ থ্রি ধরা পড়ে। সেখান থেকে একাকী মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের তিন বাচ্চার লড়াই শুরু হয়। তবু মায়ের নাছোড় মানসিকতা দেখে, পরিশ্রম দেখে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর থেকেই এত লড়াই করতে শিখেছি।’
একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অবসর ভেঙে কি ফিরছেন ভিনেশ? সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সেই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। ভিনেশের স্বামী সোমভীর কিন্ত তাঁর স্ত্রীর অবসর ইস্যুতে কোনও মন্তব্য না করলেও কুস্তি ফেডারেশনের অসযোগিতার কথা বলেছেন। ফের একবার কুস্তি ফেডারেশনের অসযোগিতার কথা তুলে ধরে বিতর্ক উস্কে দিলেন ভিনেশের স্বামী। শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিনেশ লিখেছিলেন, হয়তো আলাদা পরিস্থিতিতে আমি ২০৩২ সাল পর্যন্ত খেলতে পারব। কারণ, আমার মধ্যে লড়াই এবং কুস্তি সব সময় অটুট থাকবে। আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি না। আমি জানি না যে আমার জন্য ভবিষ্যতে কী আছে বা এই যাত্রায় আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে।’ স্ত্রীর অবসর প্রসঙ্গে ভিনেশের স্বামী বলেছেন, আমি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমি এখনই বেশি কিছু বলতে পারব না, এটা আমাদের জন্য কঠিন সময়। তবে একটা কথা বলতে পারি কুস্তি ফেডারেশন আমাদের সঙ্গে নেই। খেলোয়াড়ের পাশে কেউ না দাঁড়ালে পারফর্ম করবে কী করে?