বাঙালির প্রিয় উতসব শুরু হতে বাকি আর মাত্র কয়েকটি দিন। কিন্তু তার আগেই সবজির বাজারে জিনিসপত্রের দাম পৌঁছেছে আগুন ছোঁয়া। শাকসবজি থেকে শুরু করে বহু জিনিসপত্রের দাম এখন দাম আকাশছোঁয়া। এর একটি কারণ অবশ্যই বিভিন্ন জেলায় টানা কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন জলাধার থেকে ডিভিসির জল ছাড়া। ডিভিসির জল ছাড়ার কারণে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বহু এলাকা। বেশিরভাগ জায়গাতেই ফসল, সবজি জলের তলায়। এরপর জল নামলেও প্রায় সব সবজিতেই ধরবে পচন। এর ফলে বিঘার পর বিঘার আরও সবজি নষ্ট হবে। এই পরিস্থিতিতে চড়া দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সবজি-ফসল। কলকাতা ও পার্শবর্তী বাজারগুলিতে পটল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, উচ্ছের দাম প্রতি কিলো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এর পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। দুর্যোগের কারণে এমন পরিস্থিতিতে শাকসবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
একটানা বর্ষণ তার উপর ডিভিসির বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় প্লাবিত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। প্লাবনের ফলে চাষের জমিতে হাঁটু সমান জল জমে গিয়েছে । এর ফলে অনেক জায়গাতেই মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে পুজোর আগে মাথায় হাত চাষি ও সবজি ব্যবসায়ীদের। তার জেরেই সবজি বাজারে আগুন লেগেছে। বাধ্য হয়েই চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সবজি – ফল। পাইকারি সবজি বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে ক্রেতাদের পকেটে। পাইকারি সবজি বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম যে কেবল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়েছে তাই নয়, দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। পাইকারি বাজারে হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে প্রতিদিন ছোট ছোট লরিতে নানা ধরনের সবজি আসে। এখান থেকেই হাওড়া এবং কলকাতার সবকটি বড় বাজারের খুচরো সবজি বিক্রেতারা সবজি কিনে নিয়ে যান। সম্প্রতি সবজি চাষে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন চাষিরা। এর জেরে হাওড়া পাইকারি সবজি বাজারে আচমকাই সবজির জোগান অনেকটাই কমে গিয়েছে। বাজারে সবজির জোগান কমে যাওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পটল, ঝিঙে, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো, কুমড়ো, করোলা, বরবটি, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, ওল, বাঁধাকপি এবং কচুর মতো রোজকার প্রয়োজনীয় সবজির দাম। ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, মাঠের সবজি মাঠেই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির জোগান কমে গিয়েছে। গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বা তার বেশি সবজির দাম বেড়েছে। দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্রেতারাও সবজি কেনা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। ব্যবসা মার খাচ্ছে।’
এদিকে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বাজারে এখন শাক–সবজি থেকে আনাজ এবং মাছ মাংসের দাম বেশ চড়তে শুরু করেছে। কারণ ডিভিসি জল ছেড়েছে। তার জেরে প্লাবিত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুরের চাষের জমি জলের তলায়। সুতরাং সবজি বাজার আগুন। তার মধ্যেই একশ্রেণির ফড়েরা সুযোগ বুঝেই কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। বিক্রেতাদের দাবি, জোগান কম। তাই সবজি–আনাজপাতির দাম কেজি প্রতি ২০–৩০ টাকা করে বেড়েছে। এখন বাজারে যে দাম সবজির ও আনাজের তাতে হাত পুড়তে শুরু করেছে। রোজ পকেটে চাপ বাড়ছে আমজনতার। চোখে জল আসছে আনাজের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁঝে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে এবার দাঁড়াল ৮০ টাকা প্রতি কেজি। সেটা অন্যান্য জায়গায় ৯০ টাকারও বেশি। এই আবহে জ্যোতি আলু ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা কেজি। আর কোথাও কোথাও ৪৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। পটল ৬০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৫০ টাকা কেজি এবং টম্যাটো ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্যার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।তাদের বক্তব্য, গরমের ফসল পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙের যোগান এখন কমেছে, তার মানে এই নয় যে সবজিগুলির দাম হু হু করে বাড়বে। তাদের মতে, স্টোরে আলুর জোগানের যা অবস্থা তাতে জ্যোতি আলুর দাম এখন ৩০ টাকা প্রতি কেজির বেশি হওয়ার কথা নয়। এখনও দুর্গাপুজোর কয়েকদিন দেরি আছে , তারপর রয়েছে লক্ষ্মীপুজো, অথচ তার আগে সবজির দামে ছ্যাকা খাচ্ছেন ক্রেতারা।