বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর অবস্থার অবনতি ঘটায় আরজি কর হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভরতি করা হয়। অনশনকারী ৭ জুনিয়র চিকিৎসকের মধ্যে অন্যতম হলেন অনিকেত মাহতো। সেই অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর সামনে আসতে শুরু করেছিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই। আর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটায় হাসপাতালে ভরতি করা হল তাঁকে। জানা গিয়েছে, ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে উপস্থিত বাকি চিকিৎসকরা অনিকেতের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেই তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করার সিদ্ধান্ত নেন।তার আগে সিনিয়ার ডাক্তারেরা তাঁকে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ জানান। গভীর রাতে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে অ্যাম্বুলেন্স আসে। সেখান থেকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অনিকেতকে। তাঁকে সিসিউতে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক জানান, অনিকেত মাহাতো গুরুতর ভাবে ‘ডিহাইড্রেটেড’। অর্থাৎ শরীরে জল কমে গিয়েছে। অনিকেতের পালস রেট ছিল ১২০-১২১। এছাড়া অনিকেতের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল বলে জানানো হয়। তাঁর পেটে ব্যথাও রয়েছে। পায়ে ‘ক্র্যাম্প’ ধরে আছে অনিকেতের। বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে অনিকেতের ওপর। রক্ত পরীক্ষাও হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
১২০ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ধর্মতলায় এখনও আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সাত জন জুনিয়র ডাক্তার, তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই পরিস্থিতিতে সরকার যাতে অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয়, সদর্থক ভূমিকা নেয়, সেই দাবিই তুলছে নাগরিক সমাজ।অন্যদিকে আরও জোরালো আন্দোলনের বার্তা দিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চের তরফে শুক্রবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে দেবাশিস হালদার নাগরিক সমাজকে সংহতির বার্তা নিয়ে আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে ধর্মতলার অনশনমঞ্চ সংলগ্ন অঞ্চলেই সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। শহরবাসীর উদ্দেশে দেবাশিসের বার্তা, “আমাদের সহযোদ্ধাদের লড়াই ও মানসিক দৃঢ়তার পাশে দাঁড়ান। নবমীর বিকেলে ধর্মতলার মোড়ে এই জমায়েতকে এক ‘মহাসমাবেশ’-এর রূপ দিন।’’ ওই সমাবেশ যোগ দিতে আসা সাধারণ মানুষদের হাতে হাতে লিফলেট তুলে দেবেন তাঁরা। সেখানে উল্লেখ থাকবে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিদাওয়ার কথা। পাশাপাশি শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাথীয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের যাবতীয় দাবি মেটাতে সরকারকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। এর আগেও গত তিন দিন ধরে একই দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন, কিন্তু সুরাহা হয়নি।
এদিকে বিচার চেয়ে স্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হওয়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫৩(২) ধারা, ৩৫৩(৩)ধারায় রুজু করা হয় মামলা। এর পাশাপাশি মামলা রুজু হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মেনটেনেন্স অফ পাবলিক অর্ডার অ্যাক্টের ৯ নম্বর ধারাতেও। যা জামিন অযোগ্য। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, এরা প্রত্যেকেই ছাত্র। এরা একটি প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিল। অথচ সেই পুজো কর্তৃপক্ষ নাকি কোনও অভিযোগ করেনি। সিজার লিস্টে ৯টা ফোন শুধু বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কোথায় অস্ত্র তো নেই-ই তাছাড়া হিংসা ছড়ানোর মত কোনও বক্তব্য নেই, কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। অথচ লিখছে হেট স্পিচ। কোনো সিসিটিভি ফুটেজও দেখাতে পারবে না পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পুলিশ যত কথা বলছে তাতে মনে হচ্ছে তাঁরা যেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়েছিল। তাঁরা কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল? যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা তো কেউ পুজো প্যান্ডেলের ভিতর স্লোগান দেয়নি। তাহলে? ভয়। সরকার, তার দলদাস পুলিশ, অনুদান-ভিক্ষা পাওয়া ঠ্যাঙারে বাহিনী বা পুজো কমিটি ভয় পেয়েছে। ওরা ভয় পেয়েছে ডাক্তারদের আন্দোলনে, সাধারণ মানুষের আন্দোলনে।ওরা বুঝতে পেরেছে দুর্নীতিরাজ চালানো আর সম্ভব নয়। তাই ওরা মরিয়া হয়ে মানুষের উপর আক্রমণ নামাচ্ছে পিছন থেকে। নেতা মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন কদর্য ভাষায়। একটি রাজনৈতিক দলের সব কিছুই যখন শূন্য হয়ে ফোঁপরা হয়ে যায় তখন তাদের শাসানি গর্জানিটাই হয় সম্বল। তাই ওরা একের বেশি মানুষকে এক জায়গায় দেখলে ভয় পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে স্লোগান শুনলেই। ওরা মিছিল বা মিটিং যে কোনো ধরনের জমায়েত-সমাবেশকে নিষদ্ধ ঘোষণা করছে, এরপর ওরা গ্রন্থ, সিনেমা, নাটক, চিত্রকলা, সঙ্গীত নিষিদ্ধ করবে। ওদের আচরণ ফ্যাসিস্টদেরও লজ্জা দিচ্ছে, তালিবানরাও ওদের কার্যকলাপে হাঃ হাঃ করে হাসছে।
শাসক প্রধান কোনো কথাই বলছেন না। পেয়াদাদের হাত মারফত চিঠি পাঠাচ্ছেন, যাতে জুনিয়ার ডাক্তাররা ধর্মতলা ছেড়ে চলে যায়, তারা অনুমতি ছাড়াই ওই জায়গায় বসে আছেন, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, একবার নয় একাধিক বার পুলিশ চিঠি নিয়ে হাজির হয়েছিল। তার মানে আরেক ধরনের ‘থ্রেট কালচার’-এর শুভ সুচনা করলেন মাননীয়া পুলিশের হাত মারফত।