গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রথমে ৬ জন অনশন শুরু করলেও পরে যোগ দেন আরজি করের অনিকেত মাহাতো। টানা অনশনে সবারই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তবে অনিকেতের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর কিডনি এবং লিভারে প্রভাব পড়েছে বলে জানাচ্ছেন সিনিয়ার ডাক্তারেরা। সেই প্রেক্ষিতে আরজি করের আইসিইউ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। অনশন মঞ্চের সামনে তৈরি অ্যাম্বুল্যান্সও। যদিও অনশনমঞ্চ ছেড়ে হাসপাতাল যেতে নারাজ অনিকেত। তাঁদের সমর্থনে একাধিক সিনিয়ার ডাক্তার প্রতীকী অনশন করছেন ও সাধারণ মানুষ অনশন মঞ্চে সামিল হয়ে প্রতিবাদ করছেন। ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে এখনও অবধি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ২৫০ জন সিনিয়র ডাক্তার প্রতীকী ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন।
বুধবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনায় ডেকেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। স্বাস্থ্য ভবনে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক হয়। মনে করা হয়েছিল সমাধানের পথ বেরোবে। কিন্তু বৈঠক শেষে জুনিয়র ডাক্তাররা কাঁদতে কাঁদতে জানিয়ে দেন, আলোচনা একেবারেই সদর্থক হয়নি। এরপরই সকাল থেকে অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে ষষ্ঠীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপে ‘বিচার চাই’ স্লোগান দেওয়ার জন্য বেশ কিছু দর্শককে আটক করা হয় পরে তাদের মধ্যে থেকে ৯জন দর্শনার্থীকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।তাঁদের অপরাধ তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়ে বিচারের তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিয়েছিলেন। প্রতিবাদে বুধবার রাত ১১টা থেকে লালবাজারের অদূরে শুরু হয় অবস্থান। তাতে যোগ দেন ধর্নামঞ্চের একাধিক সদস্য। অবস্থানে সামিল হন সাধারণ মানুষও।
পুজোর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর ফুচকা, ঝালমুড়ি বিক্রেতারা অভিযোগ করেন তাদের থেকে বাবুরা টাকা চান বলে। বহু জায়গায় তাদের হেনস্থাও হতে হয়।কেবল তাই নয়, হুইলচেয়ারে বসা ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে প্রতিমা দর্শনে গিয়ে পুজোকর্তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলে এক মায়ের বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। আবার আগাম টিকিট না কাটলে প্রতিমা দর্শন করতে না দেওয়ারও অভিযোগ সামনে এসেছে কয়েকটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। এবার আর জি কর-কাণ্ডের আবহে শহরের দুর্গাপুজোর মন্ডপে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শ্লোগান উঠলো। কিন্তু এমনই তো হওয়ার কথা! খুন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার পরে কেন এই বোধ তো জাগারই কথা। আরও বড় প্রশ্ন, এই প্রতিবাদী সত্তাকে আমরা যেন মরতে না দিই। কিন্তু পজী কমিটি ও পুলিশ সেটা করতেই সচেষ্ট।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে পৌঁছয় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। তার আগে অবশ্য সাতজন অনশনকারীকে আলাদা আলাদা করে চিঠি দেয় তাঁরা। বলা হয়, তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই তাঁরা যেন অনশন মঞ্চ ছেড়ে চলে গিয়ে অন্যত্র দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। এই চিঠির পরই অনশনকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ধর্নামঞ্চেও আসেন পুলিশ অফিসাররা। পুলিশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অনশনকারীদের শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ। পুলিশের বক্তব্য, তাঁরা অবৈধভাবে এই অবস্থান করছেন। ধর্মতলায় মঞ্চ বাঁধার কোনও অনুমতি তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা যেন সেখান থেকে উঠে যান। এমনই জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
বৃহস্পতিবার দুপুরেই দক্ষিণ কলকাতার পুজো মণ্ডপে ‘বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ন’জনকে হাজির করার কথা। তার আগে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশও আলিপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সিনিয়র ডাক্তারেরা কয়েক জন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আলিপুরে যান। মনে করা হচ্ছে, ওই আন্দোলনকারীদের জামিনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত। এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে পথে নেমেছেন অন্যান্য বেসরকারি চিকিৎসকরাও। গণইস্তফার ঘটনা ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিক সরকারি হাসপাতালে সেটা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এবার এই আন্দোলনে সামিল হতে চলেছেন রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালদের চিকিৎসকরা। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।