গত শনিবার থেকে আজকের শনিবার, হিসাব দাড়ায় ৮দিন, এই টানা ৮দিন ধরে ধর্মতলায় অনশন করে ধর্নায় বসে আছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সময় যত এগচ্ছে সেই সঙ্গে আরও তীব্রতর হচ্ছে আন্দোলন। শুক্রবার নবমীর রাতে আরও দু’জন জুনিয়র ডাক্তার নতুন করে আমরণ অনশনে যোগ দিলেন পরিচয় পণ্ডা এবং আলোলিকা ঘোড়ুই। পরিচয় শিশুমঙ্গল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের পিজিটি-র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া আর আলোলিকা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রথম বর্ষের পিজিটি। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, সরকার তাদের বিচারের দাবি না মানা পর্যন্ত এ লড়াই থামবে না। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁরা ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। দ্বিতীয়বারের কর্মবিরতির পর জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্মতলায় অনশন শুরু করেছেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন শুরু করেছিলেন। প্রথমে অন্যান্য হাসপাতালের ৬ জন অনশন শুরু করলেও পরে যোগ দেন আরজি করের অনিকেত মাহাতো। তবে বৃহস্পতিবার রাতে অনিকেতের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক পর্যায়ে পৌঁছলে তাঁকে ভর্তি করা হয় আরজি করের আইসিসিইউতে। এরই মাঝে নতুন করে আমরণ অনশনে যোগ দিলেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার।আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, টানা আন্দোলনের জেরে তাঁদের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা কিছুটা হলেও দুর্বল। কিন্তু তাঁদের মনোবল এতটুকু কমেনি। কারণ, প্রথম দিন থেকে এখনও পর্যন্ত যেভাবে রাজপথে নেমে মানুষ তাঁদের পাশে থেকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে উত্তরোত্তর মনোবল আরও বাড়ছে।
এদিকে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে আংশিক কর্মবিরতির পথে হাঁটল আরও দুই বেসরকারি হাসপাতাল। শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আংশিক কর্মবিরতি ফর্টিসে। সোম ও মঙ্গলবার পেনডাউনের সিদ্ধান্ত পিয়ারলেসে। জানা গিয়েছে শনিবার রাত থেকে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন সিনিয়র ডাক্তাররাও। একদিকে পরপর সরকারি হাসপাতালে যখন সিনিয়ার ডাক্তারেরা গণইস্তফা দিচ্ছেন অন্যদিকে, একের পর এক বেসরকারি হাসপাতালেও কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন চিকিৎসকরা। অ্যাপোলো, মণিপাল, আর এন টেগোরের পর এবার আংশিক কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিলেন ফর্টিস হাসপাতালের ডাক্তারেরা। আগামী বুধবার পর্যন্ত নন-ইমারজেন্সি পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। দু’দিন পেন ডাউনের পথে হাঁটতে চলেছে পিয়ারলেস হাসপাতালের ডাক্তাররা। ফর্টিস হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আংশিক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে তারা। সোম ও মঙ্গলবার পেন ডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিয়ারলেস হাসপাতাল। মেডিকা হাসপাতালেও ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত নন-ইমারজেন্সি পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এই মর্মে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের ১১২ জন চিকিৎসক। এর আগে আংশিক কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, মনিপাল হাসপাতাল, আর এন টেগোর হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল ফর্টিস এবং পিয়ারলেস হাসপাতাল।
আন্দোলনের মাত্রা তীব্র করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার অনশনমঞ্চের সামনে মহাসমাবেশের ডাক দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। বামেরাও কর্মী সমর্থকদের কোনও রকম দলীয় পতাকা না নিয়েই সেখানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে। তাতে যোগ দেন অসংখ্য মানুষ।ভিড়ের চাপে ডোরিনা ক্রসিং থেকে কেসি দাস পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যেন অন্য রকম পুজো উদযাপন করছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। একসঙ্গে তারা গেয়ে ওঠেন ‘আগুনের পরশমণি। প্রসঙ্গত, প্রতিবাদ মিছিল, বৈঠক, অবস্থান এবং ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন তুলতে জুনিয়র ডাক্তারদের দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু কাজ হয়নি কোনও। ১০ দফা দাবিতে প্রতিবাদ ও আমরণ অনশন। বৃহস্পতিবারই আরজি করের চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়। রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দ্রুত দাবি না মিটলে আগামীদিনে গোটা দেশে চিকিৎসা পরিষেবা বনধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্য প্রশাসনকে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে সহানুভূতিশীল হয়ে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছে সর্বভারতীয় চিকিৎসকদের সংগঠন।