জাদুঘরের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পরিচিত করাতে বিশ্বের সবদেশেই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক জাদুঘর যেমন রয়েছে, তেমনি বিশ্বের অনেক দেশে আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে রয়েছে অদ্ভুত ও উদ্ভট বিষয়ের জাদুঘর। যেমন আরশোলার জাদুঘর, পুতুলের জাদুঘর, পোড়া খাবারের জাদুঘর প্রভৃতি।
মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ: বিস্ময়কর ও অদ্ভুত এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবের ওলিনকা ভিটিকা ও ড্রাফেন গ্রুবিটিক। প্রাক্তন প্রেমিক ও প্রেমিকাদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং তাদের প্রেমের স্মৃতি সংরক্ষণে ২০০৬ সালের দিকে এই জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করেন তারা। আস্তে আস্তে সংগ্রহের পরিমাণ বাড়তে থাকায় ২০১০ সালের দিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গড়ে তোলা হয় এটি। নানান রকম আর ধরনের এখানে প্রায় কয়েকশো জিনিস স্থান পেয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা তাদের ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের স্মৃতি নিয়ে হাজির হন এই জাদুঘরে।
মেগুরো প্যারাসাইটোলজিক্যাল মিউজিয়াম: বহু পরজীবী, জীবাণু ও কীট দিয়ে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘর। ১৯৫৩ সালে ডক্টর সাতোরু কামেগাই নামে একজন কীটতত্ত্ববিদ অনেকটা শখের বশেই জাপানের টোকিওতে এটি চালু করেন। এখানে ৬০ হাজারেরও বেশি পরজীবী প্রাণী এবং সেই বিষয়ক ৫০ হাজার বই রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, কেঁচো, নানা জাতের সূক্ষ্ম কৃমি, ছারপোকা, মশা, উকুন ছাড়াও এখানে নাম না জানা অনেক কীট রয়েছে।
অ্যাভানোস হেয়ার মিউজিয়াম: জাদুঘরটি তুরস্কে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১৬ হাজার নারীর চুলের সংগ্রহশালা। অ্যাভানোসের দক্ষ কুমার চে গালিপ তার স্টুডিওর নিচে এই জাদুঘর তৈরি করেন। বছরের জুন ও ডিসেম্বরে যিনি প্রথম জাদুঘরে আসেন তাকে ১০ বিজয়ী ঘোষণার জন্য নিমন্ত্রণ জানানো হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে ক্যাপাডোশায় এক সপ্তাহের সব খরচ-সহ ফ্রিতে গালিপের ওয়ার্কশপ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
মিউজিয়াম অব ব্যাড আর্ট: এটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহর বোস্টনে অবস্থিত। ১৯৯৩ সালে বাজে, কুরুচিপূর্ণ ও দৃষ্টিকটু সব ছবি নিয়ে শুরু হয় এই জাদুঘরের পথচলা। যার ছবি যত খারাপ হবে, তার ছবিই ঠাঁই পাবে এখানে। মূলত সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পীদের সামর্থ্য সম্পর্কে অবহিত করে হীনম্মন্যতা কমিয়ে উৎসাহিত করাও এর অন্যতম লক্ষ্য।
সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অব টয়লেট: অদ্ভুত এই জাদুঘরে গেলে দেখতে পাবেন টয়লেট নিয়ে সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাস। ভারতের দিল্লির এই জাদুঘরে রয়েছে সাধারণ থেকে শুরু করে কারুকার্যমণ্ডিত সব টয়লেট। এমনকি ভিক্টোরিয়ান টয়লেটও আছে।
আপসাইড ডাউন মিউজিয়াম: ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তৈরি জাদুঘরটি মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে অবস্থিত। এতে রয়েছে একেবারে ভিন্ন ধরনের চমক। একটি ফ্ল্যাটের কয়েকটি রুম নিয়ে সাজানো এই জাদুঘরে সবকিছুই উল্টো। আপনি একটি ঘরের ভেতর হাঁটলে মনে হবে আপনি ঘরের ছাদে হাঁটছেন। দেখতে ঘরের মতো হলেও এখানে রয়েছে ক্যাফে, যেখানে আপনি চাইলে বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। মজার ব্যাপার হলো, এখানের জিনিসপত্রগুলোও উল্টো! এখানে যাওয়ার পর আপনার সঙ্গে একজন স্টাফ থাকবেন, যিনি আপনাকে ছবি তুলে দেবেন।
বাটা জুতার মিউজিয়ামঃ কানাডার টরন্টোতে রয়েছে বাটা জুতার মিউজিয়াম। বাটা জুতা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা থমাস বাটার স্ত্রী ইমেলদা মার্কোর অখ্যাত জুতা সংগ্রহশালা এটি। ইমেলদা মার্কো চল্লিশের দশক থেকে জুতা সংগ্রহ শুরু করেন। সত্তরের দশকে বাটা জুতার মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়। মিউজিয়ামটিতে ১৩ হাজার জুতা রয়েছে।
লাঞ্চবক্স মিউজিয়ামঃ জর্জিয়ার কলম্বাস শহরে একটি অদ্ভুত মিউজিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়। মিউজিয়ামটিতে পালা করে লাঞ্চবক্স সাজানো রয়েছে। এসব বক্স পঞ্চাশের দশক থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত সময়ের। শিকড়প্রেমী দর্শনার্থীদের লাঞ্চবক্স মিউজিয়ামে ভ্রমণ করতে বেশি দেখা যায়।