নতুন করে অশান্ত মণিপুর। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের গুলিতে ১১ কুকি বিদ্রোহী নিহত হওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই কারফিউ জারি জিরিবাম জেলায়। রাতে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম ইম্ফল জেলায় সশস্ত্র কুকিরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনায় দু’জন সাধারণ মানুষ জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার জিরিবামে একটি দগ্ধ বাড়ি থেকে দুই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়েছে। অন্য দিকে, মঙ্গলবারও কারফিউ চলছে জিরিবাম জেলার বেশ কিছু এলাকায়। গোটা জেলা জুড়েই থমথমে পরিবেশ। আসামের সীমান্তবর্তী এই জেলাতেই সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের শিবিরে হামলা চালায় একটি দল। সিআরপিএফ পাল্টা গুলি চালালে হামলাকারীদের ১১ জন নিহত হন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, নিহতরা সকলেই কুকি যোদ্ধা। তাদের ছোড়া গুলিতেই সিআরপিএফের এক জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছে। তিনি আসামের শিলচর মেডিকেল কলেজে ভর্তি।
সোমবার রাতেও বন্দুকযুদ্ধ চলেছে পশ্চিম ইম্ফলে। সেখানে কুকি বিদ্রোহীদের গুলিতে জখম হয়েছে দু’জন। পাশাপাশি, মঙ্গলবার সকালে জিরিবামের একটি বাড়ির ভিতর থেকে দুই প্রৌঢ়ের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এর পরেই জিরিবাম জেলা জুড়ে জারি হয়েছে কারফিউ। অন্য দিকে, ১১ জন গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক-এর মৃত্যুতে একাধিক জায়গায় বনধ ঘোষণা করেছে কুকি গোষ্ঠীগুলি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মণিপুরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ ও আধাসেনার যৌথ বাহিনী। এর মাঝে গত মাসের শুরুতেই মণিপুরে আরও ছ’ মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আই (আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা আফস্পা)-এর মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম এবং লামফেল-সহ ১৯টি থানা এলাকা ছাড়া গোটা রাজ্যেই এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এখনও রাজনৈতিক চাপানউতর চলছ
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মণিপুরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ও আধাসেনার যৌথ দল। এর মাঝে গত মাসের শুরুতেই মণিপুরে আরও ছ’মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা)-এর মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম এবং লামফেল-সহ ১৯টি থানা এলাকা ছাড়া গোটা রাজ্যেই এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এখনও রাজনৈতিক চাপানউতর চলছেই।
মণিপুরে হিংসার শুরু গত বছর মে মাসে। তবে এই রাজ্য ও তার আশপাশের অঞ্চলে হিংসার বয়স সাত দশকেরও বেশি পুরোনো। নাগা জাতির স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্রতার শুরু। একই সময়ে মিয়ানমারে বিদ্রোহ করেছিল কারেন-কাচিন-চিনরা। সব মিলে ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজ্য ও জেলায় বিভক্ত পাহাড়ি এই বিশাল জনপদের হিংসা বেশ পুরোনো। ফলে মণিপুরে রকেট লাঞ্চারের ব্যবহার দেখে এক অর্থে খুব বেশি চমকে ওঠার কিছু নেই, যদিও সেভেন সিস্টার্স’বা ‘সাত বোন’বলা হয়, কিন্তু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সংখ্যা আট। এর মধ্যে সিকিম ছাড়া বাকি সাতটিতেই অল্পবিস্তর হিংসা আছে। প্রশ্ন মণিপুরের মেইতেই ও কুকিরা কোথা থেকে অস্ত্র পাচ্ছে? উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আট রাজ্যের আয়তন এক লাখ বর্গকিলোমিটারের চেয়েও বেশি। কাছাকাছি থাকা মিয়ানমারের চারটি এলাকার আয়তন প্রায় পৌনে তিন লাখ বর্গকিলোমিটার। পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন প্রায় তেরো-চৌদ্দ হাজার বর্গকিলো। সব মিলে এই পুরো অঞ্চলের আয়তন প্রায় চার লাখ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের চেয়েও এই অঞ্চলের গুরুত্ব তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ও জাতিগত বহুত্বে। ধর্মেও এই পুরো অঞ্চল বহুত্বময়। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান—সবাই এখানে আছে। এ রকম সবার সমতলের মানুষদের সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিরাগ আছে। সেই সূত্রে সিকিম ছাড়া ওপরের ১২টি জনপদেই জাতিগত অস্থিরতা আছে। আছে অস্ত্রেরও ব্যবহার। অস্ত্রের সঙ্গে আছে মাদকেরও আন্তদেশীয় চলাচল। কিন্তু কোথা থেকে আসছে এসব? যাচ্ছে কোথায়? তার রাজনৈতিক অর্থনীতিই–বা কী