বুধবার তৃতীয় মমতা সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হল। বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। ফলে সেদিকে তাকিয়েই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এবার বাজেট পেশ হবে তা আগে থেকেই স্পষ্ট অনুমেয় ছিল। জে কারণে বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আশা ছিল, বড় অঙ্কের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ঘোষণা করা হবে। বুধবার বাজেট বক্তৃতায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে এখনও ৩৫ শতাংশের ফারাক থাকলেও এক ধাপে ৪ শতাংশ বর্ধিত ডিএ পেতে চলেছেন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘পে কমিশনের টাকা-সহ বর্ধিত ডিএ পাবেন সরকারি কর্মীরা। ফলে টাকার পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে।’’। এর ফলে তা বেড়ে দাঁড়াল ১৮ শতাংশ। ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত হারে ডিএ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বেশির ভাগ কেন্দ্রই গ্রামে। ১৭০ থেকে ১৮০টি আসনের গ্রামীণ ভোট প্রতি বার নির্বাচনের ‘নির্ণায়ক’হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গ্রামকে যে এ বারের বাজেটে দু’হাত ভরে দেওয়া হবে, তা খানিকটা প্রত্যাশিতই ছিল। বাজেট ঘোষণায় ‘পথশ্রী’ থেকে ‘বাংলার বাড়ি’ সহ একাধিক গ্রামভিত্তিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ‘পথশ্রী’প্রকল্পে আগামী অর্থবর্ষে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ৯,৬০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে ১২ লক্ষ পরিবারকে পাকাবাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবর্ষে এই টাকা পাবে আরও ১৬ লক্ষ পরিবার।

এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মমতার বাজেটের বড় ঘোষণাগুলি। প্রথমেই বলা হয়েছে, ১৬ লক্ষ মানুষ ‘বাংলার বাড়ি’ পাবেন, তার জন্য ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে আগেই বড় ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাকি ১৬ লক্ষ বাড়ির যে টাকা বাকি রয়েছে, সেই কিস্তির টাকাও ২০২৬ সালের আগে দু’দফায় মিটিয়ে দেওয়া হবে। মমতার সেই ঘোষণার প্রমাণ পাওয়া গেল রাজ্য বাজেটে। ১৬ লক্ষ অতিরিক্ত যোগ্য পরিবারকে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই পর্যায়ের প্রথম কিস্তির টাকা, পরিবার পিছু ৬০,০০০ টাকা হারে, এই বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেওয়া হবে বলে বাজেটে জানানো হয়েছে। যে কারণে ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই পর্যায়ের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতির ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

চার শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি, জানা গিয়েছিল, রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করা হতে পারে। এবারের বাজেটে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এখন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৩ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পান। ফারাক ছিল ৩৯ শতাংশ। এদিনের বাজেটে নতুন করে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক কমে দাঁড়াল ৩৫ শতাংশ।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানান, দু’বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এরই পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে এবারের বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। একই সঙ্গে নদী বন্ধন নামে নতুন প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছে রাজ্য। এই প্রকল্পেও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আশা ও অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মোবাইল দিতে আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব: গত জানুয়ারি মাসেই আশা কর্মীদের ‘উপহার’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে বলে জানালেন বাজেটে। এই জন্য বরাদ্দ করা হল ২০০ কোটি টাকা।
গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব: গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য এই সেতুর কাজ শেষ করতে চার বছর সময় লাগবে এবং সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সেতু নির্মাণের কাজে যে গতি বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ: কৃষিজ বিপণন বিভাগের জন্য ৮২৬ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়ছে। অন্যদিকে, কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, শস্যবিমা যোজনায় ১ কোটি ১২ লক্ষ কৃষকের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ১ কোটি ৮ লক্ষ কৃষককে দুই কিস্তিতে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পথশ্রী প্রকল্পে গ্রামীণ পথঘাটের জন্য বরাদ্দ ১,৫০০ কোটি টাকা, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে ৮৬৬.২৬ কোটি টাকা এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নে ৭৫৬.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
