নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাগি টলারম্যান বলেন,”পৃথিবীতে মানুষই হলো একমাত্র প্রাণী যাদের ভাষা আছে, আর এই ভাষার কারণে আমরা অন্যসব প্রাণীর থেকে আলাদা”। কে, কবে, কখন ও কেন প্রথম কথা বলেছিল? কিংবা আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রথম কবে কথা বলতে শিখেছিল? এখন যে হাজার হাজার ভাষায় মানুষ কথা বলে সেগুলো কি ওই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকেই এসেছিল? এসব ভাষার ইতিহাস থেকে কি তার উৎস খুঁজে বের করা সম্ভব? ভাষার মাধ্যমে এই যে ভাবের বিনিময়, কথার আদান প্রদান, সেটাকে দেখা হয় বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবে। সবকিছুকে বদলে দিয়েছে এই ভাষা। আর একারণেই মানুষ ভাষার উৎস সম্পর্কে জানতে উৎসাহী।

পৃথিবীতে জটিল যতো বিষয় আছে তার মধ্যে একটি এই ভাষা যা আমাদের মানুষ বানিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষ সাড়ে ছ’হাজারের মতো ভাষায় কথা বলে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা কোনটি? সবচেয়ে পুরনো ভাষার নাম জানতে চাইলে আমরা অনেকেই ভাবি ব্যাবিলনীয়, সংস্কৃত কিম্বা মিশরীয় ভাষার কথা। সাধারণত আমরা বলি যে ভাষা ছ’হাজার বছর পুরনো। কিন্তু ভাষার প্রকৃত উৎস যদি খুঁজে দেখতে হয় তাহলে অন্তত ৫০ হাজার বছর পেছনে ফিরে যেতে হবে। অনেক ভাষাবিজ্ঞানী মনে করেন, ভাষার ইতিহাস আসলে এর চেয়েও পুরনো।

ভাষার মধ্যে রয়েছে শব্দ।এক বা একাধিক শব্দ দিয়ে তৈরি ভাষা হল ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম। এই সব ভাষার মধ্যে অনেক ভাষা আবার বিলুপ্তির পথে। প্রতিটি ভাষায় রয়েছে ভিন্নতা। এসব ভাষায় অনেক ধরনের শব্দ ব্যবহার হয়। একেকটি শব্দের অক্ষরের সংখ্যা হয় একেক রকম। কোনো কোনো শব্দ আছে তিন অক্ষরেই শেষ আবার কিছু আছে ৭ থেকে ৮টি পর্যন্ত অক্ষরের প্রয়োজন হয়।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইংরেজি শব্দ কি “Pneumonoultramicroscopicsilicovolcanoconiosis” নিউমনোআলট্রামাইক্রোস্কোপিকসিলিকোভলকানোকোনিওসিস। শব্দটি ফুসফুসের একটি রোগের নাম। এখানে ৪৫ টি বর্ণ আছে। আর একটি বড় শব্দ হল ‘Floccinaucinihilipilification’। এই শব্দে অক্ষরের সংখ্যা ২৯টি। যার অর্থ কোনো ব্যক্তিকে ছোট করে দেখা। এই শব্দটির প্রচলন হয়েছিল উনিশ শতকে।


কিন্তু এর থেকেও বেশি অক্ষরের শব্দ আছে ডিকশনারিতে। যে শব্দটির অক্ষরসংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৯টি। দীর্ঘতম ইংরেজি শব্দের সঠিক উচ্চারণ কী, তা আজ পর্যন্ত কেউই বলতে পারেননি। কারণ, সেটি উচ্চারণ করতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। শব্দটির অর্থ কী, তা জানা যায়নি। তবে শব্দটি একধরনের প্রোটিনকে নির্দেশ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেহে প্রায় ২ কোটি প্রোটিন রয়েছে। এসব প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে তৈরি হয়। এ রকমই একটি খুব পরিচিত প্রোটিন হলো টিটিন। ওই অভিধানেই বলা হয়েছে, টিটিন নামক প্রোটিনটির রাসায়নিক নামকেই নির্দেশ করে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৯টি অক্ষরযুক্ত দীর্ঘতম ইংরেজি শব্দটি। শব্দটি একবারই অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারপর থেকে ওই শব্দটিকে বাতিল করা হয়। এখন এই শব্দটি ছোট করে বলা হয় ‘টিটিন’। তবে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় শব্দ হিসেবে বিবেচিত হয় এটি- methionylthreonylthreonylglutaminylalanyl…isoleucine ।

এই প্রোটিন একটি মলিকিউলার স্প্রিং হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের মাংসপেশির পরোক্ষ নমনীয়তা (প্যাসিভ ইল্যাস্টিসিটি) বৃদ্ধি করে। কিন্তু এই প্রোটিনের রাসায়নিক নাম ঠিক কতটা দীর্ঘ? জানানো হচ্ছে, কোনেকটিনের রাসায়নিক নাম যে শব্দটি চিহ্নিত করে, তাতে মোট ১৮৯৮১৯টি বর্ণ রয়েছে। ১৯৬৪ সালে নির্মিত ওয়াল্ট ডিজনি প্রযোজিত ‘মেরি পপিনস সিনেমার একটি গানের সূত্রে জনপ্রিয় হয় এই শব্দটি। বলা হচ্ছে, পৃথিবীর দীর্ঘতম শব্দ ঠিক কতটা দীর্ঘ তার আঁচ পেতে গেলে ‘Supercalifragilisticexpialidocious’ শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে পরপর পাঁচ হাজার বার।