এভারেস্ট কেবলমাত্র পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গই নয়, তার মধ্যে রয়েছে অনেক অদ্ভুত রহস্য। বহু পর্বতারোহী যেমন এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছে তেমনি এভারেস্ট নিয়ে তাদের নানা ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে যার মধ্যে কিছু খুব ভয়ঙ্কর। বেশ কিছু দিন ধরেই পর্বতারোহীরা ক্রমাগত দাবি করে আসছিলেন, যে এভারেস্টে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে ভয়ঙ্কর শব্দ আসতে শুরু করে। সেই কণ্ঠস্বর বিভিন্ন ধরনের।ওই আওয়াজ রাতের অন্ধকারে রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। দুঁদে পর্বতারোহীরাও যে কারণে ওই আওয়াজে ভয় পেয়েছেন।কখনও কখনও আওয়াজ এত বিপজ্জনক হয়েছে যে পর্বতারোহীরা সারারাত ঘুমাতেও পারেন নি।
হাই-অলটিটিউড গ্লেসিয়ার থেকে রাতের দিকে যে একটা ভয়ংকর শব্দ শোনা যায়। সেই অভিজ্ঞতা সাধারণ পর্যটক থেকে নামী এক্সপিডিশন লিডার, শেরপা থেকে গ্লেসিওলজিস্ট এমনকি বিজ্ঞানীরাও এই রহস্যের পিছনে যুক্তি খুঁজেছেন। অভিযাত্রী ডেভ হ্যান বহুবার এভারেস্ট শৃঙ্গে অভিযান করেছেন। তিনিও পার্বত্য উপত্যকার চারপাশে বিভিন্ন স্থানে নানা রকম শব্দের কথা শুনেছিলেন। অন্যদিকে হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কটিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী ইভজেনি পোডলস্কির কানেও পৌঁছায় সেই খবর। ইভজেনি পোডলস্কি জানিয়েছিলেন, এভারেস্ট এমন এক অঞ্চল যেখানে মানুষ আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতেই পারে। রাতে তাপমাত্রা সেখানে প্রায় -১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে! ভয়ংকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই পরিবেশে যা কিছুই ঘটুক, তা আনক্যানি লাগতে বাধ্য।ডেভ হ্যান যিনি ১৫ বার এভারেস্টে উঠেছেন তিনি বলেছিলেন, এই শব্দটি এভারেস্ট থেকে অনেক দূরে শোনা যায়। এটা একটা অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ। কখনও কখনও নতুন পর্বতারোহীরা এই আওয়াজ শুনে ভয় পায়, কারণ তারা এই ধরনের শব্দ শুনতে অভ্যস্ত নয়।
কিন্তু কথা বলেই থেমে যাননি ইভজেনি পোডলস্কি। তাঁর নেতৃত্বে পরে একদল গবেষক হিমালয়ের ওই বিশাল উচ্চতায় গবেষণা শুরু করেন। গবেষকরা নেপালের হিমালয়ে এক সপ্তাহের বেশি ট্রেকিং করে সেখানে ট্র্যাকার্ডিং-ট্রামবাউ হিমবাহ সিস্টেমে সিসমিক কার্যকলাপ পরীক্ষা করেছিলেন। তাঁরা মাউন্ট এভারেস্টে তিন সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন। হিমবাহের গভীরের কম্পন পরিমাপ করার জন্য বরফের উপর সেন্সর টুল স্থাপন করেছিলেন। যে প্রযুক্তি ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ওই শব্দ-রহস্যের কিনারা করতে সক্ষম হন। ২০১৮ সালে নেপালের হিমালয়ে ইভজেনি পোডলস্কির নেতৃত্বে পরে একদল গবেষক হিমালয়ের ওই বিশাল উচ্চতায় গবেষণায় নামেন। বিজ্ঞানীদলটি ওই সিসমোগ্রাফিক ডেটা পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, হিমালয়ে রাতের ওই শব্দগুলির কারণ কোনও অতিপ্রাকৃত প্রাণী নয়, কোনও তুষারমানব নয়, কোনও দেবতাও নন। শব্দ-রহস্যের পিছনে রয়েছে চরম ঠান্ডা। তাঁরা দেখেছিলেন, অন্ধকার নামে আসার পরে ওই অঞ্চলে খুব দ্রুত এবং অতি মাত্রায় তাপমাত্রার পতন ঘটে। তখন ঝপ করে নেমে যাওয়া ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না ওই এলাকার প্রকৃতি। তখন হিমবাহের বরফ ফেটে যেতে থাকে। তারই শব্দ বিকট আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর যাঁদের কানে তা পৌঁছয়, তা ভয়ংকর লাগে, আতঙ্ক মনে হয়, বুক-কাঁপানো কোনও জন্তুর বলে মনে হয়! রাতের এভারেস্টের যে রূপ ভয়ঙ্কর মায়াবী হয়ে ওঠে, যারা এই দৃশ্য চাক্ষুশ করেছেন তারাই এই রূপের নেশায় সেখানে বারবার ছুটে যেতে চান।