‘ইট ওয়াজ এ ডার্ক ডে ইন ডালাস/ নভেম্বর সিক্সটি থ্রি/ এ ডে উইল লিভ অন ইনফ্যামি/…
দ্য ডে দ্যাট দে কিলড্ হিম, সামওয়ান সেড টু মি, সন দ্য এজ অফ দ্য অ্যান্টিক্রাইস্ট জাস্ট অনলি বিগান’।
তবে ৫৭টা বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যারহস্য কুলকিনারাহীন, কেন কেনেডি হত্যার তিন বছরের মধ্যে ১৮ জন সাক্ষীর মৃত্যু হল? আজও কোনও উত্তর দিতে পারেনি আমেরিকা প্রশাসন৷
জন কেনেডির হত্যাকাণ্ডকি একটি বিচ্ছিন্ন খুনের ঘটনা, নাকি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল তার আড়ালে? কিন্তু কি সেই ষড়যন্ত্র, কারা ছিল নেপথ্যে?জবাবে চক্রান্ত তত্ত্বের প্রবক্তারা নির্দিষ্ট কোনও দিকেই আঙুল তুলতে পারেন নি। কখনও সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি, কখনও ফিদেল কাস্ত্রো, কখনও সিসিলিয়ান মাফিয়া,কখনও রিপাবলিকান শিবির, এমনকি খোদ আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-কেওসন্দেহের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
জর্জ ওয়াশিংটন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প- আমেরিকার মোট ৪৪ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে সেরা প্রেসিডেন্টের তালিকায় আমেরিকার রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, থিওডোর রুজভেল্ট, থমাস জেফারসন, উড্রো উইলসনের পরেওকেনেডিকেজায়গা দেন না। তিনি পুরো একটা মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। তিনি সমালোচিত হয়েছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধ কিংবা কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে উৎখাত করার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের জন্য।এছাড়া কেনেডির সঙ্গেমেরিলিন মনরোর অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জনও আছে। এতকিছুর পরও কেনেডি একই সঙ্গে আলোচিত এবং জনপ্রিয়।
কেনেডি হার্ভার্ডে পড়ার সময়েই তার গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য ইউরোপ ভ্রমণে খুব কাছ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব ইউরোপ দেখেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণাগ্রন্থে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে জার্মানির ব্যাপারে ব্রিটেনের ভুল সিদ্ধান্ত ও তার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। কেনেডির গবেষণাপত্রটি ‘হোয়াই ইংল্যান্ড স্লেপ্ট’ নামে প্রকাশিত হয় এবং সে বছর বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায় স্থান পায়। যুদ্ধকে খুব কাছাকাছি দেখে কেনেডি রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহিত হন এবংনিজেকে তৈরি করতে তিনি বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন।
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ম্যাসাচুসেটস থেকে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য হওয়ার জন্য ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হন কেনেডি। ছ’বছর সদস্য থাকার পর কেনেডি সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর জ্যাকুলিন বোভিয়ারের সঙ্গে বিবাহ, পুরনো পিঠের ব্যথায় হাসপাতালে থাকার সময়’প্রোফাইলস ইন কারেজ’ লিখে পুলিৎজার, ফের দ্বিতীয় মেয়াদে সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন।এরপরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে অসাধারণ বাগ্মিতা ও নিজের ক্যারিশম্যাটিক ভাবমূর্তির কারণে লিন্ডন বি জনসন, অ্যাডলাই স্টিভেনসন ও হিউবার্ট হামফ্রের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী নির্বাচিত হন কেনেডি।
প্রসঙ্গত আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট কেনেডিই ছিলেন প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট এবং কম বয়সে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়।তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যেকোনো ধরনের যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আন্তরিক হলেও ১৯৬১ সালে ভিয়েনা সম্মেলনে নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে বার্লিন প্রসঙ্গে যেমন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন, তেমনই ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে উৎখাত করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে প্রচণ্ড সমালোচনার সম্মুখীন হন। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়ঙ্করতা নিয়ে কেনেডির একধরণের সচেতনতা ছিল। আগ্রাসন ঠেকানোর চিন্তা তার সবসময়েই ছিল। যে কারণে সারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে ১৯৬৩ সালেসোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও আমেরিকা– এক চুক্তিতে সাক্ষর করে।
কেনেডি পররাষ্ট্র নীতির পাশাপাশি আমেরিকার জাতীয় নীতি্র ক্ষেত্রেও সুদের হার কমিয়ে বৃদ্ধির হার প্রসারের চেষ্টা করেন। তার আমলেই প্রথমবারের মতো আমেরিকার বার্ষিক বাজেট ১০০ বিলিয়নের ঘর স্পর্শ করে। আমেরিকার জাতীয় নীতি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছু ভুলত্রুটি এবংব্যক্তি জীবন ঘিরে গুঞ্জন থাকা স্বত্বেও জন এফ কেনেডি আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট।