কর্মবিরতি শেষে ৪২ দিন পর অবশেষে কাজে ফিরলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শনিবার থেকে কর্মবিরতি তুলবেন এমনই ঘোষণা করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই কথা মতো, শনিবার সকালে থেকে জরুরি পরিষেবায় কাজে যোগ দেন জুনিয়র ডাক্তাররা, তবে জরুরি পরিষেবায়। ৪২ দিন নিজেদের দাবি ছিনিয়ে আনতে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তারা। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। শেষে নিজেদের কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর’স ফ্রন্ট। ‘থ্রেট কালচার’, হাসপাতালের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সহ একাধিক দাবিতে বারে বারে সরব হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পাশাপাশি বার্তা দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনার দাবিও। তবে কাজে ফিরলেও আংশিক কর্মবিরতি চলবে বলে জানানো হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। অর্থাৎ নির্যাতিতার ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ভাবেই জুনিয় ডাক্তাররা আন্দোলন থেকে পিছু হাঁটছেন না সেকথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম শুনানি তার আগে রাজ্যের তরফে দেওয়া প্রতিশ্রুতির আশানুরুপ পদক্ষেপ না হলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। তাঁদের বক্তব্য, ‘শুধু আশ্বাসে ভুলছি না।’ রাজ্য প্রাসনকে তাঁদের সরাসরি হুঁশিয়ারি, যদি সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সরকারের পদক্ষেপ নজরে না পড়ে, তাহলে ফের কর্মিরতি শুরু করা হবে’। এদিকে থ্রেট কালচারের অভিযোগে কল্যাণী জেএনএম কর্তৃপক্ষ ৪০ জন পড়ুয়াকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে। হোস্টেল ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ঢোকার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। থ্রেট কালচার চালানোর অভিযোগেই ৪০ জন পড়ুয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার নির্যাতিতার ন্যায় বিচারের দাবিতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও পর্যন্ত মিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের এদিনের মিছিলে অংশ নেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। মিছিলের পরই ধরনা তোলেন তাঁরা। এদিকে আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ডাক্তাররা। আরজি কর কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে এদিন রাজপথে জ্বলেছিল মশাল। শনিবার জরুরি পরিষেবাতে ফিরলেও সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে তারা ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন।
গত ৯ অগাস্ট আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর থেকেই বিচার চেয়ে কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মোট পাঁচ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সরকার পক্ষের সঙ্গে দুবার বৈঠক হয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। একবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে। অন্যটি নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে। দু দফা বৈঠকের পর হাসপাতালে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত দিকগুলি প্রয়োজনীয় সংস্কাররের বিষয় ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হয। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে ১০ দফা নির্দেশিকা-সহ একটি চিঠি পাঠান মুখ্যসচিব। এরপরই স্বাস্থ্যভবনের সামনে টানা ১০দিন অবস্থানে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।
জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অভিযোগ, “একমাসের বেশি সময় ধরে সিবিআই তদন্ত করছে। কতটা তদন্ত এগোল এসব তো মানুষ জানতে চাইছে। আমরাও জানতে চাই। আন্দোলন বন্ধ হয়ে গেল এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তদন্ত প্রক্রিয়া ঠিকমতো না এগোলে দশ দিন পর আবার ফেরত আসা হবে।” স্বাস্থ্যভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিলে স্লোগান উঠেছে, “আর কতদিন সময় চাই/ জবাব দাও সিবিআই।” আবার স্লোগান উঠেছে সন্দীপ ঘোষের নামেও। টানা ৪৩ দিন রাজপথে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টানা কর্মবিরতি চালিয়েছে। বস্তুত জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলির পিজিটিরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় কাজে ফেরা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের তরফে বার্তা আসার পরেই কাজে যোগ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। সূত্রের খবর মহিলা চিকিৎসক খুনের তদন্ত সহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের আন্দোলন চলবেই। দরকারে ফের রাজপথে নেমেই দাবি আদায় করা হবে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ট্রমা কেয়ার বিভাগেই জরুরি পরিষেবা দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ সেখানেই সব রোগী পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে ৷ তবে, জরুরি বিভাগের যেসব সুবিধা ছিল, তা রোগীদের পুরোপুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ৷ উল্লেখ্য, গত 14 অগস্ট রাতে কয়েক হাজার দুষ্কৃতী আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়৷ এর ফলে বহু দামি জিনিসপত্র ও জীবনদায়ী ওষুধ নষ্ট হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে জরুরি বিভাগ এখনও রোগী পরিষেবার জন্য তৈরি করা সম্ভব হয়নি।