পাঞ্জাবের শেষ শিখ সম্রাট দুলীপ সিংয়ের মেয়ে সোফিয়া দুলীপ সিং। সোফিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ব্রিটেনে। মেয়েদের ভেটের অধিকার আদায়ে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এর জন্য তাঁকে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়। কর না দেওয়ায় তাঁর গয়না নিলামে বিক্রি করা হয়। তারপরও সোফিয়া তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। ১৯১০ সালে, মেয়েদের ভোটাধিকার চেয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এইচএইচ অ্যাসকুইথের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে লন্ডনের পার্লামেন্টের দিকে যাত্রা করা ৩০০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে সোফিয়া অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাসকুইথ তাদের সঙ্গে দেখা করেন না এবং পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে পুলিশ এবং পুরুষরা তাদের মারধর করায় বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। অনেক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন এবং দিনটিকে ব্রিটেনে ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ১১৯ জন মেয়েদের মধ্যে সোফিয়াও ছিলেন।
অনিতা আনন্দের লেখা সোফিয়ার জীবনী ‘সোফিয়া: প্রিন্সেস, সাফ্রাগেট, রেভল্যুশনারি’ থেকে জানা যায়, সোফিয়া ৩০০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে অ্যাসকুইথের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনের পার্লামেন্টের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু অ্যাসকুইথ তদের সঙ্গে দেখা করেন না। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে পুলিশ তাদের মারধর করলে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। অনেক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন এবং সেই দিনটিকে ব্রিটেনে ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলা হয়। সেদিন হওয়া ১১৯ জন মেয়ের মধ্যে সোফিয়াও ছিলেন। সোফিয়ার জন্ম ১৮৭৬ সালে দুলীপ সিংয়ের প্রথম স্ত্রী বাম্বা মুলারের ঘরে। ১৮৪৯ সালে বৃটিশরা শিখ রাজ্য দখল করার পর বালক দুলীপ সিং ভারত থেকে ইংল্যান্ডে নির্বাসিত হন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, অমূল্য কোহিনূর হীরাসহ সব সম্পদ তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি সমর্পন করতে বাধ্য হন। সোফিয়া বড় হয়েছেন ব্রিটেনের সাফোকে। শৈশব খুব একটা মধুর ছিল না। সিংহাসন পুনরুদ্ধারের ব্যর্থ দুলীপ সিং নির্বাসিত হন ফ্রান্সে। আর পরিবারকে রেখে যান ঋণে ডুবিয়ে। কিন্তু রানি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে তাদের পারিবারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। সোফিয়া ছিলেন রানির ধর্মকন্যা। এই সম্পর্কের সুবাদে একটি বাড়ি পান সোফিয়ারা। ব্রিটিশ সরকারের দপ্তর ‘ইন্ডিয়া অফিস’ থেকে বাৎসরিক ভাতাও পেতেন তারা।
সোফিয়া বড় হওয়ার পর রানির অনুগ্রহে হ্যাম্পটন কোর্ট প্রাসাদে একটি অ্যাপার্টমেন্ট পান। সেখান থেকেই তিনি ভোটের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদে অংশ নিতেন। জীবদ্দশায় সোফিয়া ভারতে চারবার সফর করেন। সব সফরই ব্রিটিশ কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সোফিয়া লাহোরে স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং লালা লাজপত রায়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক প্রত্যয়ে অনুপ্রাণিত হন। পরে সোফিয়া যোগ দেন মেয়েদের ট্যাক্স রেসিসট্যান্স লিগে। তাদের স্লোগান ছিল ‘নো ভোট, ভোট ট্যাক্স’। অর্থাৎ ভোটাধিকার না থাকলে ট্যাক্সও দেওয়া হবে না। সোফিয়া এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১১ সালে তিনি একবার প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সামনে ঝাপিয়ে পড়েন। তাঁর হাতে ছিল একটি ব্যানার। তাতে লেখা ছিল ‘মেয়েদের ভোট দিতে দিন’। ওই বছর তিনি নিজের আদমশুমারির ফর্ম পূরণ করেননি এবং কর দিতেও অস্বীকার করেন।
ইতিহাসবিদরা সোফিয়াকে ‘মেয়েদের ভোটাধিকারের জন্য ভারতীয় কর্মী ও শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ কর্মীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু’ বলে অভিহিত করেন। ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে একটি আইন পাশ হয়, যেখানে সম্পত্তি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণের শর্তে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। আর সমান ভোটাধিকার দেওয়া হয় আরো দশ বছর পর অর্থাৎ ১৯২৮ সালে। পরের বছর রাজনৈতিক কর্মী সরোজিনী নাইডু এবং অ্যানি বেসান্টের সঙ্গে লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিসে যান সোফিয়া। রাজ্য সচিব তাদের কথা শুনেছিলেন কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
সোফিয়ার জীবনের শেষ বছরগুলো অতিবাহিত হয়েছিল তার সহচর এবং গৃহকর্মী জ্যানেট আইভি বওডেনের সঙ্গে। বওডেনের মেয়ে দ্রোভনা ছিলেন সোফিয়ার ধর্মকন্যা। দ্রোভনা লেখক অনিতাকে জানান, রাজকুমারী প্রায়ই ভোটের গুরুত্ব নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন। ১৯৪৮ সালের ২২ আগস্ট ৭১ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যেই সোফিয়া মারা যান।