কলকাতা ব্যুরো: ৯৬ ঘণ্টা আগে ভোট প্রচারে করোনা বিধি মানাতে কলকাতা হাইকোর্ট কড়া পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। তারপর থেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। হয়েছে শলাপরামর্শ। তারপরে অনেক জানান দিয়ে শুক্রবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন সারাটা দুপুর বৈঠক করেছে। দিনের শেষে যা হয়েছে, তাতে পর্বতের মূষিক প্রসব, প্রবচনটাই বেশি উপযোগী বলে মনে হচ্ছে।
হাইকোর্ট, জেলাশাসক এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল, প্রয়োজনে আদালতকে সামনে রেখে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানালো, এদিন থেকেই সন্ধ্যে সাতটা থেকে পরদিন সকাল দশটা পর্যন্ত কোনরকম মিটিং, মিছিল সভা করা যাবে না। ফলে রাজনৈতিক দলগুলি দিনের বেলায় আগের মতই প্রচার চালাতে পারবে। যদিও ফুটনোটে একটি অংশ জুড়েছে কমিশন। তা হল দিনের বেলায় ভোট প্রচারেও যদি করোনা বিধি মানা না হয় এক্ষেত্রে সেই রাজনৈতিক দল ও নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।
নাগরিকরা যে প্রশ্ন তুলছেন, প্রথমত গত প্রায় দেড় মাস ধরে যে রাজনৈতিক প্রচার ও রোড শো চলছে, তার নব্বই শতাংশই দিনের বেলায়। ভিড় হচ্ছে, বিধি মানা হচ্ছে না। রাস্তায় যানজট হচ্ছে। তা দেখার পরেও হঠাৎ করে কমিশনের কেন মনে হল, সন্ধ্যের পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত প্রচারে বিধিনিষেধ থাকা উচিত। সন্ধের পর থেকে করোনা ঘুরে বেড়ায় কি না নাগরিকরা রসিকতা করে সেই প্রশ্নও তুলছেন। দ্বিতীয়তঃ মামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের প্রশ্ন, যেসব রাজনৈতিক দল হাইকোর্টের নির্দেশ এর কপি হাতে পাওয়ার পরেও তাদের তারকাদের এনে দিনে চারটে, পাঁচটা করে সভা আর রোড শো করাতে পারে, তারা কমিশনের ফৌজদারি মামলার ভয় কতটা গুটিয়ে যাবে? উল্টে তারা যে আরও বেপরোয়া হয়ে দিনের বেলায় ঢালাও প্রচারের সুযোগ নেবে, সেটাই স্বাভাবিক। ফলে ‘রাজনৈতিক বস’ দের না চটিয়েই হাইকোর্টকে একটা কিছু জবাব দেওয়ার জন্যই কমিশন এমন একটা নির্দেশ দিল কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও আগামী তিনটি দফায় ভোটের ৭২ ঘন্টা আগে প্রচার শেষ করার নির্দেশ জারি রেখেছে কমিশন। সব রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে কমিশন এই নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে দিয়েছে ।
প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে কোভিড বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে বলেছে কমিশন। যদি অমান্য হয় তা হলে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা দায়েরের কথা বলে নিজেদের সাহস বুঝিয়ে দিয়েছে কমিশন। যারা রাজনৈতিক জনসভার আয়োজন করবে তাদের দায়িত্ব থাকবে যাতে ওই জনসভায় অংশগ্রহণকারীরা কোভিড বিধি মানে। জেলার নির্বাচন আধিকারিকদের ক্ষমতা দেওয়া হল, যদি কোনও রাজনৈতিক দলের সভায় করোনা বিধি মানা না হয়, তিনি সেই সভা বাতিল করতে পারেন।
এদিন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রাক্তন আমলা স্মরণ করছেন গত ৯ এপ্রিল জারি করা কমিশনের বিজ্ঞপ্তিটি। সেখানেও আট দফা বিধি-নিষেধের শেষে বলা হয়েছিল বেআইনি দেখলে সভা বাতিল করে দেবে কমিশন। আসলে সেটা যে নেহাতই কথার কথা বা কাগুজে বাঘ কমিশন সেই উদাহরণ এদিনের বিজ্ঞপ্তিতে নিজেরাই দিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বর্ষিয়ান আমলারা।