কলকাতা ব্যুরো: কী কাণ্ড, কী কাণ্ড। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রাজনৈতিক জগতেও চলে এল। আরও ভালো করে বললে ভোটের দুনিয়ায়।
সুশান্তের মৃত্যু থেকে ফায়দা তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বিহারের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। বলিউডের এই অভিনেতা মরেও শান্তি পেলেন না।
তাঁর মৃত্যু নিয়ে কাঁটাছেঁড়া চলছে। পুলিশ, আদালত, তদন্ত, কিছুই বাদ নেই। তার মধ্যে আবার বিহার ও মহারাষ্ট্র পুলিশের টানাপোড়েন। মহারাষ্ট্র সরকারের ভূমিকায় রহস্য, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। সব মিলিয়ে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পরেও যেন জমজমাট বলিউডি সিনেমা। এর মধ্যে আবার বিহারে রাজনৈতিক আসরেও এই মৃত্যুকাণ্ড এসে পড়েছে। অথচ সুশান্ত কেন, তাঁর চোদ্দ পুরুষ কখনও রাজনীতির সাত হাতের মধ্যেও ছিল না। কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা এমন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা অস্ত্র ছাড়লে তো।
মরেও সুশান্ত অস্ত্র হয়ে উঠলেন কেন, জানেন?
ওঁর জাতি পরিচয়টাই বিহারে রাজনীতির বড় সুযোগ এনে দিল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার থেকে শুরু করে এখন আরজেডি-র শীর্ষনেতা তেজস্বী যাদব, এমনকি লোক জনশক্তি দলের প্রধান চিরাগ পালোয়ান, সবাই সুশান্তের বাড়িতে একবার হলেও গিয়েছেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার দেখা করেছেন প্রয়াত অভিনেতার বাবা, দিদির সঙ্গে।
সুশান্তের মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসতে টুইটের পর টুইট করে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি অন্তত ১০০ টুইট করেছিলেন।
কোথাও কিছু নেই তখনও। তবু রূপাই প্রথম সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে ছিলেন।
তা সুশান্তের জাতিগত পরিচয়টা কী রকম?
যার জন্য একটা দুঃখজনক মৃত্যুতেও এভাবে আসরে নামলো রাজনৈতিক দলগুলি। সুশান্ত জাতিতে রাজপুত। বিহারের মতো সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের রাজ্যে সুশান্ত উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি। বিহারে রাজপুতরা কিন্তু জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু রাজনীতিতে তাদের প্রভাব প্রচুর। ভোটে এই প্রভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। যেকারণে সব রাজনৈতিক দলকে রাজপুতদের গুরুত্ব দেয়।
২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি উচ্চবর্ণের ৬৫ জনকে প্রার্থী করেছিল। তার মধ্যে রাজপুত ছিলেন ৩০ জন। অন্যদিকে, জেডিইউ, আরজেডি এবং কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধনের মূল ভিত্তি মুসলিম-যাদব ভোট হলেও তারা ৩৯ জন উচ্চবর্ণের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই ৩৯ জনের ১২ জন ছিলেন রাজপুত। প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিত্বের কথা বললেও আরজেডি গত বছর দলের রাজ্য সভাপতি পদে মনোনীত করেছে একজন রাজপুত জগদানন্দ সিংকে।
বিহারের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আরও কিছু তথ্য মনে রাখা দরকার। একসময় দুই উচ্চবর্ণ রাজপুত ও ভূমিহারদের মধ্যে একসময় প্রবল বিরোধ ছিল।
কিন্তু লালুপ্রসাদ যাদব মণ্ডল রাজনীতি শুরু করার পর এই দুই গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয় রাজ্যের ভোট রাজনীতিতে প্রভাব ফেলা এবং সরকার পরিচালনার শরিক হওয়ার লক্ষ্যে। জাতপাতের বেড়াজালে আটকে থাকা বিহারে তাই উচ্চবর্ণের এই ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ এখন। জনসংখ্যা যত কমই থাকুক, রাজপুতদের কদরও এই একই কারণে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বেশি। সুশান্তের মৃত্যুর পর সেই রাজপুত আবেগকে সংহত করার প্রতিযোগিতা এখন চরমে। সুশান্তের চেয়ে বড় রাজপুত মুখ আর নেই বিহারে। ফলে অভিনেতা সুশান্তকে টানাটানি চলছে তাঁর মৃত্যুর পর। হায় রাম।