সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
না। এমন বৃষ্টি বিশ বছরে দেখিনি এ রাজ্যে। আগাম বৃষ্টির সতর্কতা ছিল। আকাশ মেঘলা, মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছিল। কিন্তু ১৩ তারিখ রাত প্রায় ৩ টে থেকে শুরু হলো বৃষ্টি। একটানা। ভাবলাম সকালে হয়তো কমে যাবে। ও মা, থামলো কোথায়! বেলা ৮ টা নাগাদ দাপট তার বেড়ে গেলো কয়েক গুণ। প্রবল বৃষ্টি সঙ্গে দমকা বাতাস। দরজা-জানলা বন্ধ করেও বাইরের সেই তান্ডব শুনতে পাচ্ছি।
এক টানা কী ভীষণ বৃষ্টি…..সে লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। রাজস্থানে বাস করছি প্রায় ২০ বছর। বৃষ্টি দেখেছি। কিন্তু এমন একটানা! না, মনে করতে পারছি না। ঝরছে তো ঝরছেই। রীতিমতো বড় অঘটনের আশঙ্কায়, ভয়ে ঘরের মধ্যেই সিঁটিয়ে গিয়েছি। বৃষ্টির টানা শব্দ এক সময় কিছুটা যেন কমলো। ঘড়িতে দেখি বেলা তিনটে। প্রায় সাতঘন্টা পরে তার গতি একটু কমলো।
জয়পুরে শহরের একদিকে আমার ফ্ল্যাট। একটু এগোলে বডিচাপর। মূল ব্যবসা কেন্দ্র। এনেকটা কলকাতার ধর্মতলা বলবো না, হাতিবাগানের মতো। স্থায়ী দোকান বেশি। ফুটেও বড় ব্যবসা চলে। জলে ভাসছে সেখানকার দোকানপাট। তার মধ্যে শহরের বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন। এ দিক ওদিক করে বিকেলের দিকে ঘরে বসেই যে টুকু খবর পেলাম তাতে হাওয়ামহল, রামগড়, জলমহল এলাকায় বাড়ি-ঘরে জল ঢুকেছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে দিল্লি রোডে। জয়পুর-দিল্লি রাস্তার ধারে যে সব পাহাড় রয়েছে এই বৃষ্টিতে তাতে ধস নেমেছে। ধসে রাস্তার একদিকে বন্ধ। জলের চাপ কমাতে ওই এলাকার খালের লক গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জলের তোড়ে তা ভেঙে গিয়েছে। গোটা জয়পুরের উপর যেন তান্ডব চালিয়েছে প্রকৃতি।
দক্ষিণ কলকাতার আমার আদিবাড়ি। ছোট থেকে ঠনঠানিয়া, সেন্ট্রাল এভিনিউ একটু বৃষ্টিতে ভাসতে দেখেছি। আবার গাড়িও রাস্তার মাঝপথে ডুবে থাকা, চেনা ছবি। গত মে মাসে কলকাতার আম্পানের ভয়ঙ্কর দুর্যোগের কথা শুনেছি। সেখানে বৃষ্টির থেকেও ছিল ঝড়ের দাপট। তাতে ক্ষয়ক্ষতির কথাও শুনেছি। কিন্তু মরুরাজ্যে দেখলাম বন্যার পরিস্থিতির পর কিছু এলাকার জল নেমে গেলে বাড়ি থেকে গাড়ি-সব অর্ধেক ডুবে রয়েছে বালির নিচে। এ দৃশ্য কোনো দিন কলকাতায় বসে ভাবতেও পারা যাবে না।
বৃষ্টির তেজ কমলেও কয়েকঘন্টা বাদে বাদে সে আবার মুষলধারে নামছে। আর শুধু জয়পুর নয়, গোটা রাজস্থানেই এই বৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছে। কেউ শুনেছে জয়সলমিরে বন্যা হয়েছে? এবার সেই অবস্থা হয়েছে মরুপ্রান্তের। কোটার অবস্থা হয়েছিল আরও খারাপ। কিন্তু সেখানে চম্বল নদীর বাঁধ খুলে জল কিছুটা বের করে দেওয়ায় বড় বিপদ কেটেছে। বিকানের, চিতোর, উদয়পুর- যেখানেই খোঁজ নিচ্ছি, একই খবর। জলে ভাসছে গোটা রাজস্থান।
এক বৃষ্টি মরুপ্রদেশের চেহারা বদলে দিয়েছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এখনও বিপদ কিন্তু কাটেনি। আপাতত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত গোটা রাজস্থানে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি চলতে পারে তারপরেও আরও দু’দিন। এই অবস্থায় ফের যদি ওই ভাবে বৃষ্টি হয়, তার পরিণতি কী হবে জানি না। এখানকার বহু বয়স্ক মানুষ বলছেন চার দশকে এমন বৃষ্টি দেখেননি তাঁরা। আমি তো কখনো ভাবিইনি। গ্রীষ্মে অতি গরম আর শীতে হাড় হিম ঠান্ডার সঙ্গে এতদিন সহবাস করেছি, কিন্তু এবার মুখোমুখি হলাম ভয়ঙ্কর বৃষ্টির।