শেষমেষ রাজ্যের সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আলোচনা হল না। কিন্তু কেন হল না? নবান্ন সভাঘরের ভেতর কী আলোচনা হচ্ছে তা রাজ্যবাসীর জানাটা খুব দরকার। কারণ, এই আন্দোলনে তারাও সঙ্গে ছিলেন। তাই এমন দাবি রেখেছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। লাইভ স্ট্রিমিং না হলে কোনো ভাবেই আলোচনা নয়, এই কথাটি তারা রাজ্য সরকারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। বোঝাই গিয়েছিল তাদের আন্দোলনকে যারা সমর্থন দিয়েছেন তাদের এটুকু সম্মান দেওয়া উচিত। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনো ভাবেই লাইভ সম্প্রচার চায় না, তারা সাধারণ মানুষ দেখুক জানুক তারা চায়না। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে টানা ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলেছে টানটান স্নায়ুযুদ্ধ। আদৌ কী হবে আজকের বৈঠক? নাকি নবান্নের সভাঘরের সামনে থেকে ফেরত আসবেন জুনিয়র ডাক্তাররা? এই প্রশ্নের উত্তরের দিকে নজর রেখেছিল গোটা বাংলার মানুষ। শেষ পর্যন্ত মিলল না কোন সমাধান সূত্র।
মুখ্যসচিব জানান, তারা আজকে ইমেল করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিপ্তে জুনিয়ার ডাক্তাররে নবান্নে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ৫টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন। ওরা ৩২ জন এসেছিলেন। ওদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ওরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবী করেছিলেন। আমরা ভিডিও রেকর্ডিংয়ের কথা বলেছিলাম। ওরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ে অনড় ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছিল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করছিলেন।দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় আন্দলনরত চিকিৎসকরা অনড় থাকায় বাতিল হয় আজকের বৈঠক। কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, “আমাদের কাজ হচ্ছে তাঁদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। আজকেও মুখ্যসচিব তাদের চিঠি দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আগের বার ঘটনা ছিল ভিন্ন। সুপ্রিম কোর্ট বা সিবিআইয়ের কাছে ছিল না। আমরা আজকের বৈঠকে রেকর্ডিংয়ের সুযোগ রেখেছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট যেটা পারে আমরা তা পারি না। এই নিয়ে কোন আলোচনা আইনত সঠিক নয়। যেহেতু তদন্ত বিচারাধীন, আগামী ১৭ তারিখ শুনানি। তাই লাইভ সম্প্রচারে আমাদের কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। বাংলার মানুষের একটা আবেগ আছে। আমরা সবাই চাই নির্যাতিতা বিচার পাক। এটা আমাদের হাতে নেই। সিবিআই তদন্ত করছে বলে আমি কোনও মতামত জানাব না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন তাকি ঠিকঠাক বলছেন? না একেবারেই ঠিকঠাক বলেন০ নি। প্রথমত জুনিয়ার ডাক্তারেরা এসেছিলেন তাদের পাঁচটি দাবি নিয়ে, সেখানে আদালতে বিচারাধীন মামলার কোনো প্রশ্নই নেই, আসতেও পারে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বারেবারে সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন। কেন জুনিয়ার ডাক্তারেরা বিচারাধীন প্রসং নিয়ে আলোচনা করবেন। আসলে মুখ্যমন্ত্রীকে এ ধরণের কথাই বলতে হবে, যা প্রসঙ্গের বাইরে। তাছাড়া উনি তো খুব সাধারণ বিষয় থেকে শুরু করে প্রশাসনিক স্তরের মিটিং লাইভ স্ট্রিমিং করেন। যেখানে দেখা যায় ইনি আইপিএস,আইএএস অফিসারদের ধমকাচ্ছেন চমকাচ্ছেন। তাহলে আজকের এই আলোচনা যদি সাধারণ মানুষ দেখেন শোনেন তাতে অসুবিধা কোথায়। তাছাড়া জুনিয়ার ডাক্তারেরা তো সাধারণ মানুষের কাছে সবরকম ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ, তারা মুখ্যমন্ত্রীকে কী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাদের কী উত্তর করছেন কারণ তাদের আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ের ছিলেন এই মানুষেরা।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাধারণ মানুষের দেশা শোনার কোনো দাম না থাকলেও আন্দোলনকারীদের কাছে আছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী স্বভাবসুলভ গাদাখানেক বাজে কথা বলে নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার কিছুক্ষণ পর নবান্নের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা বলেন, ‘আমরা খুব বিনীত ভাবে জানাতে চাই, আমরা চেয়ারের জন্য কোনও আলোচনা করতে আসিনি। আমরা এসেছিলাম ন্যায়বিচারের দাবিতে। যাতে আলোচনা হয়, সেই দাবিতে এসেছিলাম।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারের উপর ভরসা রয়েছে বলেই আলোচনার টেবিলে বসতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা হতাশ। আমরা এখনও আশা রাখছি। এই চেয়ারের প্রতি আমাদের ভরসা এখনও আছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি এখনও।’ সাংবাদিক বৈঠকের পর পুনরায় স্বাস্থ্য ভবনের ধরনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা।
নবান্নের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাই যে দায়ী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেই আশা রেখেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে বলেও বিশ্বাস রেখেছিলেন।বাইরের কারও নির্দেশে’র যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। জুনিয়র চিকিৎসকরা খোলা মনেই আলোচনা করার জন্য নবান্নে এসেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন দু ঘন্টা ধরে এ কথা প্রশাসনের তরফে তাদের জানানো হয়নি। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী যেসব কথা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন তা বাংলার মানুষ গ্রহণ করেনি।পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যারা আলোচনা করতে এসেছিলেন তাদের হতাশ করেছে প্রশাসনিক ব্যর্থতা।