সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বঙ্গভঙ্গের বিষ ছড়িয়ে পড়লো গোটা বঙ্গভূমির অঙ্গন জুড়ে । বাঁধ ভাঙা প্রতিবাদ, প্রতিরোধে উত্তাল বাঙলা মায়ের আঁচলতল। একে একে জড়ো হচ্ছেন মাতৃমন্ত্রে দীক্ষিত আগুন পাখির দল । পথে নেমে গানে কবিতায় মাতিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সে কি উন্মাদনা । তার অন্তত তিরিশ বছর আগে মাতৃসাধনা ও দেশমুক্তির বীজমন্ত্র -” বন্দেমাতরম” রচনা করেছেন ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র । তাঁরই লেখা ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ” অনুশীলন ” কে আদর্শ হিসেবে সামনে রেখে প্রথম বিপ্লববাদী ” অনুশীলন সমিতি ” গড়ে উঠলো এই মাটিতেই । দুই অকুতোভয় বাঙালি সন্তান ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র ও সতীশ চন্দ্র বসু ১৯০১-‘০২ এর ২৪শে মার্চ তারিখে গড়ে তুললেন এই সশস্ত্র সংগ্রামী দল । একে একে নাম লেখাতে এলেন সশস্ত্র সংগ্ৰামে বিশ্বাসী অমর বাঙালি বীরের দল।
ঝড়ো হাওয়ার মতো বাঙলার আনাচে কানাচে তীরগতিতে ছড়িয়ে পড়লো দেশসেবকদের নিয়ে গড়া ছোট ছোট দল । সঙ্গে যাত্রা ও পালাগানের আসর । সবগুলোই ছিল বীর রসে মোড়া । এরই পাশাপাশি নগরবাউল থেকে চারণ কবিদের ভূমিকা ছিল জনজাগরণের ডাক দেওয়া ।
এদিকে বরোদায় গেলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । কিছুদিন পর অরবিন্দের নির্দেশ মতো তিনি ফিরলেন বাঙলায় । মন দিলেন দল গড়ার কাজে । পাশাপাশি শক্তিসাধনা ও দেহচর্চার উপর জোর দিলেন যতীন্দ্রনাথ । বর্ধমান,বাঁকুড়ায় ঘুরে ঘুরে ছেলে যোগাড় করে দল গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন । ঠিক তারপরই সেজদার পরামর্শ নিতে গেলেন বারীণ । দেশবাসীর নির্লিপ্ততা, অনীহা দেখে ক্ষোভের সঙ্গে সমস্ত কথা জানালেন তাঁর দাদাকে । অরবিন্দ ভাইকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে বললেন । তিনি শান্ত নির্লিপ্ত কণ্ঠে জানালেন ,- একদিন এই পথেই আসবে দেশের মুক্তি । তারও কিছুদিন পর তাঁর “সেকেন্ড মাস্টার” এর কাছে বরোদায় এলেন ভগিনী নিবেদিতা । সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষত্র ও ব্রম্হ তেজোদীপ্ত অমৃত পুরুষ অরবিন্দ ১৯০৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসে পা রাখলেন কোলকাতার মাটিতে । বাঙলা মায়ের সাধক ছেলেকে পেয়ে উত্তাল গোটা দেশ -প্রদেশ । অবশেষে মোটা টাকার মাস মাইনের চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় চলে এলেন বাঙলা মায়ের কোলে । ১৯০৬ এর ১২ই মার্চ বাঙলা ভাষায় বিপ্লববাদের সাপ্তাহিক পত্রিকা ” যুগান্তর” এর প্রকাশ ঘটালেন । ওই বছরের ৬ই আগস্ট মহান বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পালের সম্পাদিত ইংরেজি দৈনিক ” বন্দেমাতরম ” পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দিলেন । একই বছরের ১৫ ই আগস্ট জাতীয় মহবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করলেন ।
( চলবে)